আলমডাঙ্গা ব্যুরো: গোপনে দুর্বল মুহূর্তের আপত্তিকর ভিডিও উঠিয়ে আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুরের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দাবিকৃত চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরের বখাটে আশরাফুল। গতকাল দুপুরে প্রতারিত গৃহবধূর আত্মীয়স্বজন আশরাফুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আটক যুবকের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ আরেক যুবককে আটক করেছে। প্রেমিকরূপী এই ব্ল্যাকমেইল সিন্ডিকেটের হোতা চুয়াডাঙ্গা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ম্যানেজার মনির হোসেনকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুরের প্রবাসী মোশারফ হোসেনের বাড়ি থেকে গতকাল ১০ এপ্রিল দুপুরে এক উঠতি বয়সী যুবককে এলাকাবাসী আটক করে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। সে পাঁচকমলাপুর গ্রামের আবু বক্করের ছেলে। একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে সে গত দুদিন ধরে প্রবাসীর স্ত্রীর নিকট ৩ লাখ টাকা দাবি করে আসছিলো বলে প্রবাসির পরিবার থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে আটক যুবক জানিয়েছে, সে চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া তার একটি কম্পিউটারের দোকান আছে। সম্প্রতি জনৈক ব্যক্তি তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে এ শর্তে যে, আলমডাঙ্গা শহরের গোবিন্দপুরের প্রবাসী মোশারফ হোসেনের স্ত্রীর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা এনে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে মোবাইলফোনে কথা বলেই তাকে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে। সে সময় টাকা না দিলে দুর্বল মুহূর্তের তুলে রাখা আপত্তিকর ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এক পর্যায়ে প্রবাসীর স্ত্রী টাকা দিতে সম্মত হয়। গত দুদিন সে টাকা নিতে গিয়েছিলো। গতকাল ২য় দিনে প্রবাসীর বাড়ি উপস্থিত হলে টাকার অঙ্ক নিয়ে দর কষাকষি করার ছলে আত্মীয়স্বজন দিয়ে যুবকটিকে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
এদিকে, প্রবাসীর স্ত্রী পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ার কাহিনি, দুর্বল মুহূর্তের আপত্তিকর ভিডিও উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা দাবির ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতারিত গৃহবধূর সাথে মোবাইলফোনে কথা বলে ও বিভিন্নসূত্রে জানা যায়, প্রবাসী মোশারফ হোসেনের বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচলিয়া গ্রামে। তিনি গোবিন্দপুরের মেয়ে সেলিনা খাতুনকে বিয়ে করেন। কয়েক বছর আগে বউয়ের আবদার রাখতে প্রবাসী মোশারফ হোসেন গোবিন্দপুরে বাড়ি নির্মাণ করেন। সেই বাড়িতে প্রবাসির স্ত্রী সন্তানসহ বসবাস করেন। তাদের মেয়ে চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদরাসার ছাত্রী। সেই সূত্রে সেলিনা খাতুন প্রায় চুয়াডাঙ্গা শহরে যাতায়াত করেন। সে সময় তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অসৎ কর্মচারি ইমরানের সাথে ধর্মভাই সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে অসততার কারণে ইমরান চাকরিচ্যুত হলে সে ও আটক আশরাফুল কম্পিউটারের দোকান দেয়। ইমরান আটক আশরাফুলের গ্রামের পার্শ্ববর্তী গোপালনগরের রুস্তম আলীর ছেলে। এরই এক পর্যায়ে ইমরানের সহযোগিতায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখার ম্যানেজার নীলফমারীর মনির হোসেনের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সেলিনা। কোনো এক দুর্বল মুহূর্তের আপত্তিকর দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে ওই ধুরন্ধর মনির হোসেন। পরে মনির ওই ভিডিও সেলিনা খাতুনকে মেসেঞ্জারে পাঠায়। ভয় দেখায় ৩ লাখ টাকা না দিলে ইন্টারনেট ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার। মনির হোসেনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েই আটক যুবক আশরাফুল (২৩) গত দুদিন প্রবাসীর স্ত্রীর নিকট টাকা নিতে যায়।
তবে প্রতারিত গৃহবধূ দাবি করেছেন, আটক যুবকের কম্পিউটারে ভিডিওটি তৈরি করা। ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখার ম্যানেজার প্রতারক মনির হোসেনের সাথে আটক যুবকও জড়িত। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা মোবাইল ব্যাংকিং শাখার ইমরান নামের আরেক যুবকের নামও এই অবৈধ ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিং ঘটনায় উঠে এসেছে। এদিকে, আটক যুবক আশরাফুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পরে পুলিশ ইমরানকে আটক করেছে।
আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুরের প্রবাসির স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে দাবিকৃত চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে গ্যাঁড়াকলে পড়লো পাঁচকমলাপুরের বখাটে আশরাফুল
![](https://old.mathabhanga.com/wp-content/uploads/2018/04/arsaful.jpg)