পোশাক বাণিজ্যের পর এবার পিকনিক বাণিজ্যের অভিযোগ

?????????????????????????????????????????????????????????

চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করা হয় বিভিন্ন বিষয়ে চাঁদা দিতে

খাইরুজ্জামান সেতু/আহসান আলম: চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পোশাক বাণিজ্যের পর এবার পিকনিক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পিকনিকের নামে শিক্ষার্থী নার্সদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে সাড়ে ৮শ’ টাকা করে। পিকনিকে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে কেউ যেয়ে না থাকলেও তার স্টাইফেন থেকে কেটে নেয়া হয়েছে টাকা। এ নিয়ে শিক্ষার্থী নার্সদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে এ ব্যাপারে কারো টু শব্দ করারজো নেই। কেউ কানাঘোষা করলেই পরীক্ষায় ফেলের ভয় রয়েছে। কেউ কোনো অভিযোগ করলেই সমস্ত শিক্ষার্থীদের তলব করা হয় অফিসে। এক রকম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ গত ৩ মার্চ ইনস্টিটিউটের দেড়শ’ ছাত্রীকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে নিয়ে যায় শিক্ষাসফরে। পিকনিকের চাঁদা বাবদ প্রত্যেক ছাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয় সাড়ে ৮শ’ টাকা। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার ভাড়া এবং একবেলা খাওয়া খরচ কিভাবে এত টাকা হয়? প্রশ্ন ওঠে অভিভাবক মহলেও। অনেকের টাকা দেয়ার সঙ্গতি না থাকলেও বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে কেউ না গেলেও তার মাসিক স্টাইফেন থেকে পিকনিকের টাকা কেটে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এতো টাকা ব্যয়ে পিকনিকে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও অনেকেই বাধ্য হন। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে যেতে না পারলেও পরবর্তীতে তার স্টাইফেন থেকে কেটে নেয়া হয় চাঁদা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ছাত্রী নার্স জানান, চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ বছর টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে গিয়েছিলো। তাদের সর্বসাকুল্যে ৬শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে। তাদের খাবারের মানও আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিলো। নার্সিং ইনস্টিটিউটের খাবারমেন্যুর মধ্যে ছিলো সকালে খিচুড়ি আর দুপুরে শাদা ভাত, দুই টুকরো খাসির মাংস, ছোট্ট একটা মুরগির রোস্ট আর একটু ডাল। যেখানে খাবারের মেন্যুতে দই মিষ্টি বা ডিমও ছিলো না, সেখানে কিভাবে সাড়ে ৮শ’ টাকা ব্যয় হয়? অভিযোগকারীরা জানান, শিক্ষাসফরের নামে পিকনিকের চাঁদা নেয়া ¯্রফে বাণিজ্যের মানসিকতা নিয়ে করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই তার প্রমাণ মিলবে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নার্সিং সুপারভাইজার শামিমা আক্তার চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হুমকিধামকি দিয়ে টাকা আদায় করেন। অভিযোগ রয়েছে, নার্সি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আলোমতি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন চাঁদা চাপিয়ে দেয়া হয়। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বেকায়দায় পড়লেও কিছুই করার থাকে না তাদের। অসহায়ত্বের মতো সব কিছুই মেনে নিতে হয়। কারণ পরীক্ষা এবং পাস ফেল সবই নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের হাতে।
অভিযোগকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাসফর বা পিকনিক শুধু অর্থবাণিজ্যের জন্যই করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ইনচার্জ আলোমতিসহ কয়েকজন ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা এসব টাকার হিসাব কাউকে জানানো হয়নি। নার্সি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জেলার বাইরে পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হলেও জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমতি নিয়েছিলো না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শোনা যায় অনেককে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পিকনিকের কিছু টাকা আছে। তা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হবে এবং খরচের তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হবে। কয়েকদিন আগেই খরচের তালিকা টাঙিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি।
এদিকে আরেক অর্থ বাণিজ্য নিয়েও কথা উঠতে শুরু করেছে। প্রথম বর্ষের ভর্তি হওয়া ৫০ ছাত্রী সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে যোগদান করেছেন। তাদের থাকার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১৩০ টাকাহারে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ৩০ টাকাহারে দিয়ে ছাত্রীপ্রতি ১শ’ টাকাহারে আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এর আগেও চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের পোশাক তৈরির নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের আঁচ পেলেই সমস্ত শিক্ষার্থীকে অফিসে তলব করা হয়। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সইস্বাক্ষর নেয়া হয় কাগজে। পিকনিক বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে বেশ কদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। পিকনিকের জন্য জোরপূর্বক অস্বাভাবিক হারে টাকা আদায়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে বলে শিক্ষার্থী নার্স ও অভিভাবক মহল মনে করে।