শিশুটির পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ আজ

আলমডাঙ্গায় পুলিশের তৎপরতায় ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর ভূমিষ্ঠ সন্তানের লাশ দ্রুত উদ্ধার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সন্তোষজনক তৎপরতায় ধনাঢ্য আবুল কাশেম কর্তৃক ধর্ষণের শিকার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর ভূমিষ্ঠ সন্তানের লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া বাঁশবাগানের ভেতর থেকে মাটিচাপা দেয়া শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। উদ্ধার শিশুটির পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গায় দিনমজুরের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বাপের ধনাঢ্য বন্ধু কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনায় গত ১২ মার্চ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গর্ভপাত ঘটানোর পর বাড়িতে আটকে রাখা মুমূর্ষু স্কুলছাত্রীকে ওই দিনই পুলিশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ একদিকে ধর্ষককে গ্রেফতার ও অন্যদিকে ভূমিষ্ঠ সন্তানকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক অভিযান অব্যাহত রাখে। মামলার তদন্তকারি অফিসার এসআই একরামুল হরিণাকুন্ডু উপজেলা ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ছুটে বেড়িয়েছেন। সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরামুল জানান, গত ৮ মার্চ ধর্ষক কাশেম ও তার ভাই মনিরুজ্জামান ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তাকে বাড়ি থেকে হরিণাকুন্ডু শহর ও ঝিনাইদহ শহরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন ক্লিনিকে ধরনা দেয় গর্ভপাত ঘটানোর জন্য। কিন্তু ৭-৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে কেউ গর্ভপাত ঘটানোর মত ঝুঁকি নিতে সম্মত হয়নি। ওই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ধর্ষক ও তার ভাই অজ্ঞাত কোন কবিরাজের নিকট থেকে অথবা অন্য কারও পরামর্শ মত গর্ভপাত ঘটানোর ওষুধ কিনে ধর্ষিতাকে খাওয়ানো হয়। তারা প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল ওষুধ সেবনের ২ ঘন্টা পর মৃত সন্তান প্রসব করার। ওই প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা ধর্ষিতাকে ওইদিনই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু পরদিন ৯ মার্চ সারাদিনেও বাচ্চা প্রসব না হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তারা। ৯ মার্চ গভীর রাতে পুনরায় ধর্ষিতাকে তারা হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হরিণাকুন্ডু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় উপস্থিত হতে না হতেই ধর্ষিতার সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। বারান্দাতেই সন্তান প্রসবে সহযোগিতা করেন সিনিয়র স্টাফ নার্স মর্জিনা খাতুন ও রওশন আরা। ফুটফুটে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর নার্সরা পরামর্শ দেন ভর্তি ফরম পূরণ করে ভর্তি হতে। সে সময় সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর একটি গামলার ভেতর রেখে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ওই সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান জীবিত উদ্ধার করে গত ১০ মার্চ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাক্তার জামিলুর রশীদ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠান উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে শিশুটি মারা যায়। মৃত্যুর পর শিশুটিকে ১১ মার্চ আবার হরিণাকুন্ডু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে আনা হয়। অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশুটির মৃত্যুর সংবাদ হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশকে জানায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। পরিচয় উদ্ধার সম্ভব না হলে পরে সকলের পরামর্শে সিনিয়র স্টাফ নার্স মর্জিনা খাতুন মৃত শিশুকন্যাটি নিজ বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার কায়েতপাড়া গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাঁশঝাড়ের ভেতর শিশুটির লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে।
এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই একরামুল সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গতকাল ১৩ মার্চ বিকেলে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আজ ১৪ মার্চ সকালে লাশ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে শিশুটির পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ডিএনএ স্যাম্পুল সংগ্রহ ও ময়নাতদন্তের জন্য।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে অবস্থা সম্পন্ন আবুল কাশেম (৫০) বেশ প্রভাবশালী। একই গ্রামের হতদরিদ্র এক দিনমজুরের কন্যা তিয়রবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। শিশুকন্যার দিনমজুর বাপ ধনাঢ্য আবুল কাশেম সাথে একই পাড়ায় একই সাথে বড় হয়েছেন। সেই সূত্রে তারা বন্ধু। ধনাঢ্য আবুল কাশেমের বাড়িতে কন্যাটির দিনমজুর বাপ কামলা খাটে। সেই সুবাদেও শিশুকন্যার বাড়িতে আবুল কাশেমের অবাধ যাতায়াত ছিলো।
স্কুলছাত্রীর মা অসুস্থ হওয়ায় প্রায়ই তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতো দিনমজুর বাপ। বাড়িতে একা থাকতো সেই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি। বাড়িতে একা অবস্থানকারী শিশুকন্যাটির দেখাশোনা করার দায়িত্ব বর্তায় বাপের বন্ধু আবুল কাশেমের (৫০) ওপর। এ ঘটনা প্রায় ৭ মাস আগের। এই সুযোগে বাপের বন্ধুবেশী আবুল কাশেম নিজের কন্যার মতো ওই কন্যাটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। কাউকে বললে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। এরই এক পর্যায়ে ওই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে অন্তঃসত্ত্বার বয়স বেড়ে প্রায় ৭ মাস হয়। লোকলজ্জা এবং হুমকি ধামকির কারণে অসহায় হয়ে পড়ে দরিদ্র ছাত্রীর পরিবার। গত ৯ মার্চ হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ সন্তান রেখে পালিয়ে যাওয়ার পর ধর্ষিতার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। কিন্তু ধর্ষকের পরিবার ধর্ষিতা ও তার পরিবারকে বাড়িতে আটকে রাখে যাতে বাইরে চিকিৎসা নিতে না পারে। বিষয়টি একপর্যায়ে জানাজানি হয়ে যায়। পুলিশ গত ১২ মার্চ ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে থানায় মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করা হয়।