চুয়াডাঙ্গার পদ্মবিলায় টিআর-কাবিটার অর্থ লুটপাটের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাসকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও স্থানীয় সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বরখাস্তের এ আদেশে স্বাক্ষর করেন। পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ১নং প্যানেল চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বলেছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আলাদা পত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নে ইজিপিপি, টিআর, কাবিটা, টিআর (বিশেষ) প্রকল্পের প্রায় ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭৫ টাকা অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মসাতের সত্যতা মেলে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে। পরে তা তদন্তে প্রমাণিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- যেহেতু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ২০১৬-২০১৮ অর্থ বছরের টিআর, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তাবায়ন না করে টাকা আত্মসাৎ সক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় এবং ওই ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ধারা ৩৪ উপধারা(১) অনুযায়ী তার স্বীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ইউনিয়নে টিআর, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ করে এলাকাবাসী। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। অভিযোগকারীরা জানান, কোনো কাজ না করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যেসব রাস্তার নামে প্রকল্প করা হয়েছে সেসব রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। এমনকি কিছু কিছু প্রকল্পের কোনো অস্তিত্বই নেই। টিআর ও কাবিটার ৫ লাখ ৮০ হাজার এবং বিশেষ বরাদ্দের প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এলাকার লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। তারা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন। পদ্মবিলা ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অভিযোগপত্রে সই করেন। তারা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭নং পদ্মবিলা ইউনিয়নের সদর উপজেলা পরিষদ থেকে সাধারণ বরাদ্দ টিআর, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দ পদ্মবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিভিন্ন রাস্তার নাম দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যেসব রাস্তায় এসব টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেখানে কোনো মাটি পড়েনি। এমনও ভুয়া প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেখানে কোনো রাস্তাই নেই।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাসকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি মন্ত্রণালয়। পদ্মবিলা ইউপি সচিবের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আসছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর একই দিনে স্বাক্ষরিত আরেক পত্রে বলা হয়েছে- টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায়, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বিধায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।