দীর্ঘ ২৫ বছর পর জীবননগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আজ

সম্মেলন প্রতিহত করতে অপর গ্রুপের বিক্ষোভ সামবেশ ॥ পাল্টা সম্মেলনের ডাকে উত্তেজনা
জীবননগর ব্যুরো: দীর্ঘ ২৫ বছর পর জীবননগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বানকৃত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা দানা বেধেছে। এ সম্মেলন প্রতিহত করতে একটি অংশ জীবননগর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ হতে উপজেলা যুবলীগের নামে আহ্বানকৃত ওই সম্মেলনকে বিতর্কিত সম্মেলন অ্যাখ্যায়িত করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, সম্মেলন বন্ধ করা না হলে তা প্রতিহত করতে বাসস্ট্যান্ডে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পাল্টা সমাবেশ করা হবে। অপরদিকে শাপলাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়মাঠে আজ মঙ্গলবার এ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারির জন্য আবেদন করা হবে পারে।
জানা গেছে, দীর্ঘ ২৫ বছর পর জীবননগর উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯৩ সালে এখানে যুবলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের আয়োজন করায় এ উপজেলায় যুবলীগের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সড়কের মোড়ে-মোড়ে তোরণ নির্মাণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। জীবননগর উপজেলা যুবলীগের ১৯৯৩ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আনোয়ার হোসেন সভাপতি ও রুহুল কুদ্দুছ মানু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর বলবৎ থাকলেও নানা কারণে তারা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। ২০১০ সালে অসুস্থ যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুছ মানুর মৃত্যুর পর হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি দীর্ঘ ৬ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি সে সময় গঠন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আব্দুস সালাম ঈশাকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের আবারও একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ৩ বছর পর এ উপজেলায় যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শাপলকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়মাঠে আজ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ। প্রধান অতিথি থাকবেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যুবলীগের নেতৃত্ব পেতে ফেসবুক জুড়ে চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। সম্মেলন শেষে নেতৃবৃন্দ ত্রি-বার্ষিক কমিটির নাম ঘোষণা করবেন বলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঈশা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে জীবননগর পাইলট হাইস্কুল মাঠ হতে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে যুবলীগের অপরাংশের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অপরাংশের উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও শামীম ফেরদৌস ও যুগ্মআহ্বায়ক বলে দাবিদার কাজী সামসুর রহমান চঞ্চলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে বাসস্ট্যান্ডে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। শামীম ফেরদৌসের সভাপতি অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ হতে যুবলীগের নামে আহ্বানকৃত আজকের অনুষ্ঠিতব্য ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বন্ধ করে যুবলীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরবর্তীতে দিনক্ষণ ঠিক করে সম্মেলন করার জন্য অপর গ্রুপের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তা না করা হলে যুবলীগের ওই বিতর্কিত সম্মেলন প্রতিহত করতে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসমান, রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান, হাসাদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বিশ্বাস ও উপজেলা যুবলীগ নেতা আকিমুল ইসলাম। বক্তারা বলেন, জেলা যুবলীগের সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি নেই, সেখানে উপজেলায় সম্মেলন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দূরভিসন্ধিমূলক। যেভাবেই হোক বিতর্কিত ওই সম্মেলন বন্ধ করা হবে।
এদিকে গতকাল বিকেলে যুবলীগের অপর গ্রুপ এ সম্মেলন বন্ধের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সামবেশ প্রসঙ্গে যুবলীগ আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঈশা বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক পদ্ধতিতে যুবলীগের সম্মেলন আহ্বান করেছি। আমরা আমাদের সম্মেলন করবো। তারা তাদের কাজ করে যাক। উপজেলা যুবলীগের অপর পক্ষের আহ্বায়ক শামীম ফেরদৌস বলেন, যেখানে জেলা যুবলীগের কোনো কমিটি নেই। অন্যদিকে উপজেলায় এখনও পর্যন্ত কোনো ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়নি। সেখানে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন ডেকে নিজেদের পছন্দের কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। সম্মেলন বন্ধ না করা হলে প্রতিবাদে আজ আমরাও পাল্টা সম্মেলন করে তা প্রতিহত করবো।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নাহিরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রাতে বসে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরামর্শ করতে পারেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা জানান, পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।