বিএনপি-জামায়াত জোটের ত্রাস ইকরা ডজন মামলার আসামি হলেও তাকে কেন ধরেনি পুলিশ

চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়ার আশরাফ উদ্দীন খুনের প্রতিবাদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভায় বক্তাদের প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়ার দরিদ্র কৃষক আশরাফ উদ্দীনকে নৃশংসভাবে খুন করা মামলার একজন আসামিকেও গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধরতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে জাফরপুর মোড়ে রাস্তার পাশে প্রতিবাদসভায় বক্তারা বিএনপি-জামায়াতের ত্রাস সৃষ্টিকারীদের রহস্যজনক কারণে ধীর্ঘদিন ধরেই গ্রেফতার করা হয়নি, হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে সদর থানার ওসিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে পরবর্তীতে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ার মৃত আতর আলীর মণ্ডলের ছেলে আশরাফ উদ্দীনকে গত শনিবার দুপুরে নির্মমভাবে নির্যাতন করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য ইকরামুল হকসহ তার কয়েকভাই তাদের লোকজনকে সাথে নিয়ে নৃশংসতা চালায় বলে অভিযোগ। পরদিন রোববার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে মিছিল করা হয়। মিছিলকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফ উদ্দীনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি এ খুনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রতি দেন। গতকাল শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাফরপুর মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদসভা। খুনের প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শঙ্করচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আরশাদ উদ্দীন আহমদ চন্দন প্রমুখ। উপস্থাপনায় ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খালিদ। প্রতিবাদসভায় মামলার বাদি তথা নিহত আশরাফ উদ্দীনের ভাই শাহাবুদ্দিন বক্তব্য দেন। তিনি তার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করে গ্রামবাসীকে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রতিবাদসভার প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, গাড়াবাড়িয়ার ইকরামুল হক ইকরাসহ তার লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে চালানো নির্যাতন নিপীড়নে কেন পুলিশ নিরব থেকেছে তার জবাব চেয়ে বলা হয়, সদর থানার ওসি কি বিএনপি-জামায়াতের রক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন? তা না হলে যুবদলের যে ইকরার বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা তাকে কেন গ্রেফতার না করে উল্টো বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে? পুলিশের তরফে সুযোগ পেয়েছে বলেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফ উদ্দীনকে তার ছেলে-মেয়েদের সামনে খুন করার সাহস পেয়েছে। অবিলম্বে তাকেসহ তার লোকজনকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা না হলে আওয়ামী লীগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
এদিকে মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টায় একজন আসামিকেও ধরতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে, মৃত মকছেদ ম-লের ৫ ছেলে ইকরামুল হক ইকরা (৩৮), মজিবুল হক (৫৫), রবিউল হক (৫৭), আশাদুল (৪৮) শামসুল ওরফে ঝন্টু (৪৬), ইকরামুল হক ইকরার ছেলে স্বপ্নিল, মৃত নরুল ইসলামের দু’ছেলে শাহীন আলম ও এনামুল হক, মৃত সদর আলীর ছেলে জিল্লুর রহমান (৩৫), মৃত খোকাইর ছেলে হারেজ, শাহাজুলের ছেলে ছেলু, আকমান ম-লের ছেলে আব্দুল বারী, দিলছাদ ম-লের ছেলে মোজাম, রহমান ম-লের ছেলে আজিজুল, মৃত দুখি ম-লের ছেলে জালাল উদ্দীন, আবুল হাসেম, আবুল কাশেম, মৃত বাবর আলীর ছেলে খলিল, নূর ইসলামের ছেলে মিলন, মৃত ইছাহক ম-লের ছেলে ঝন্টু, ইসলাম মণ্ডলের ছেলে ফারুক, মহিতের ছেলে জুয়েল মৃত খোকাই মণ্ডলের ছেলে আব্দুস সালাম ও আব্দুস সাত্তার, আবুল বাশারের স্ত্রী জামেলা খাতুন, ইকরামুল হকের স্ত্রী ইতি খাতুন, মৃত আলীহিম মণ্ডলের ছেলে কালু, মুলুক চাঁদের ছেলে শরিফ উদ্দীন, মৃত মুলুক চাঁদের ছেলে আজিমুদ্দিন, মৃত তাহার মালের ছেলে জিয়া, কাশেম আলীর ছেলে রফিক, মৃত খোকাইয়ের ছেলে কালাম, নজরুল ইসলামের ছেলে তোতা, মাখালডাঙ্গার মৃত মোবারকের ছেলে রাজ্জাক, দীননাথপুরের মৃত দেলু মিয়ার ছেলে নূরনবী ছামদানী, আলতু মিয়ার ছেলে আরশাদ, নূরনগরের আলাউদ্দীনের ছেলে রসুল ও গাড়াবাড়িয়ার কাশেমের ছেলে আছাদসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০জন। আসামিদের প্রায় সকলেই গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছে বলে পুলিশসূত্র জানিয়েছে।