গাংনী বাজার কমিটির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে ব্যাপক উৎসবের মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণ

মাহবুবুর রহমান স্বপন সভাপতি বজলুর রহমান বুলু সম্পাদক
গাংনী প্রতিনিধি: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ব্যবসায়ীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে মেহেরপুর গাংনী বাজার কমিটির ত্রিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সভাপতি পদে মাহবুবুর রহমান স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বজলুর রহমান বুলু জয়লাভ করেছেন। মাহবুবুর রহমান স্বপন গাংনী পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান প্রয়াত আমিরুল ইসলামের জামাতা এবং বজলুর রহমান বুলু স্মরণিকা শপিংমলের মহিমা বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী।
সভাপতি পদে মাহবুবুর রহমান স্বপন চাকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মশিউর রহমান চেয়ার প্রতীকে ২৪১ ভোট পেয়েছেন। হাফিজুর রহমান মানিক (উড়োজাহাজ) ২১০, আনারুল ইসলাম (গরুরগাড়ি) ৫৪ ও হাজি রবিউল ইসলাম (আনারস) ০১ ভোট পেয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বজলুর রহমান বুলু (তালাচাবি) ৩০৯ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদরুল আলম (দোয়াত কলম) ১৮০ ভোট পেয়েছেন। মো. রফিক (টেলিভিশন) ১৩৮, মিজানুর রহমান মজনু (কাপ-পিরিচ) ১৩৫ ও আবুল কালাম আজাদ (ছাতা) ৪২ ভোট পেয়েছেন।
সহসভাপতি পদে আক্তারুজ্জামান কাজল বিজয়ী হয়েছেন। মোবাইল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২৫১ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী জামাল উদ্দীন (দেওয়াল ঘড়ি) ১৪৪, সাফিউল বাসার (কম্পিউটর) ১১২, সামসুজ্জোহা (বাইসাইকেল) ১০৫, আশরাফুল ইসলাম (রিকশা) ১০২ ও হাজি আবুল বাসার (মোটরসাইকেল) ৯৭ ভোট পেয়েছেন।
সহসাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন কামাল হোসেন। আম প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ২৪৯। প্রতিদ্বন্দ্বী মিনারুল ইসলাম (অটোবাইক) ২১২, মইনুল ইসলাম (খেজুরগাছ) ১৮৯ ও জিয়ারুল ইসলাম (ডাব) পেয়েছেন ১৫৭ ভোট।
অর্থসম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন তুহিন রেজা। টিউবওয়েল প্রতীকে তিনি পেয়েছে ৪০৯ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী রওশন মাহমুদ (হাঁস) ৩৩৫ ভোট ও আলমগীর হোসেন (হারিকেন) ৭১ ভোট পেয়েছেন। প্রচার সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন কাজিম উদ্দীন। চশমা প্রতীকে তিনি ৩০৪ ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুজ্জামান (জগ) ২৬২ ও মনিরুজ্জামান মনি (হাতি) ২৪৪ ভোট পেয়েছেন। দফতর সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন রাজিব মিয়া রাজু। শ্যালোমেশিন প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৫৯। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল হাসনাত (পাঞ্চাবী) ৩৫০ ভোট পেয়েছেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নির্বাহী সদস্য পদে ভোট গণনা চলছিলো।
গাংনী বাজার কমিটির ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, মোট ৮৯০ জন ভোটারের মধ্যে পোল হয় ৮৫৪। ভোট প্রয়োগের শতকরা হার ৯৫ দশমিক ৯৫ ভাগ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়োগপ্রাপ্ত কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ ১৫টি পদে ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলে। তবে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি ও বুথ স্বল্পতার কারণে ভোট গ্রহণ শেষ করতে ৬টা বেজে যায়। অবশ্য ৪টার মধ্যে যারা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন তাদের ভোট নেয়া হয়। সাড়ে ৬টার দিকে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু করেন পোলিং অফিসারবৃন্দ।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সার্বক্ষণিক অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়ে উপস্থিত ছিলেন গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার ও ওসি তদন্ত কাফরুজ্জামান। নির্বাচনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাজার কমিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি উপদেষ্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল ও গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার। নির্বাচনের শুরু থেকে ভোট গ্রহণের শেষ দিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখায় প্রার্থী, ভোটারসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গাংনী বাজার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাজি আলফাজ উদ্দীন বলেন, সকলের সহযেগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ ভোট সম্পন্ন করা গেছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা চেম্বার অ্যান্ড কমার্স সদস্য সাফুয়ান উদ্দীন আহম্মেদ রুপক, জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আহসান হাবীব সোনা, সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাজি আলফাজ উদ্দীন, নির্বাচন কমিশন উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন, সহকারী নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম, নির্বাচন কমিশন সদস্য নবীর উদ্দীন, মজিরুল ইসলাম, আসাদুল আলম, আনারুল ইসলাম বাবু, জাহিদুল ইসলাম, মাজেদুল হক মানিক, হাফিজুর রহমান, হাফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। প্রয়োজনীয় পুলিশ-আনসার মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন। মুর্হুমুর্হূ স্লোগানে মুখরিত এলাকা। প্রার্থীদের পক্ষে স্লোগানে সরব কর্মী-সমর্থকরা।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ০২ জুন গাংনী বাজার কমিটির ত্রিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নির্বাচন হয়নি। গেল ২৪ ডিসেম্বর বাজার কমিটির সাধারণসভায় নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকে শুরু নির্বাচনের প্রক্রিযা। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে ভোটের উৎসব শুরু হয়।