আড়াইমাস ধরে সিলেটে : দু একদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়ে দুজনই লাশ হয়ে ফিরছে আজ

নরসিংদীতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে চুয়াডাঙ্গার ট্রাকচালক ও হেলপার নিহত             ( ইনসেটে হেলপারের ফাইল ছবি)

স্টাফ রিপোর্টার/মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: কথা ছিলো দু একদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে ট্রাকচালক সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও তার সহকারী শামীম হোসেন। আজ ভোরেই এরা বাড়ি ফিরছেন ঠিকই, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। এরা দুজনই চুয়াডাঙ্গার সন্তান। গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দি এলাকায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। ট্রাকের চাকা ফাটার কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত দুজন হলেন, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ নতিডাঙ্গার মোতালেব খানের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও দক্ষিণ গোবিন্দপুর গড়গড়ির সনজের মোল্লার ছেলে শামীম হোসেন (২২)। সাদ্দাম হোসেন ট্রাকচালক ও তার সহকারী ছিলেন শামীম। দুজনই চুয়াডাঙ্গার এক মালিকের ট্রাক নিয়ে আড়াই মাস আগে সিলেটে ভাড়া মারার জন্য যান। সেখানে ভাড়ার কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে আজ লাশ হয়ে ফিরছেন।
ভৈরব হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ঢাকা থেকে ভৈরবগামী মালবাহী একটি ট্রাক দড়িকান্দি এলাকায় চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী যাতায়াত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাকটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ট্রাকচালক ও তার সহকারী। এ সময় আহত হন বাসের ৯ যাত্রী। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মী, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা মিলে হতাহতদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখান থেকে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের মৃতদেহ গতকালই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। সন্ধ্যায় দুজনের মৃতদেহ তাদের বাড়ির উদ্দেশে লাশবাহি গাড়িযোগে নেয়া হয়।
নতিডাঙ্গার ট্রাকচালক সাদ্দম হোসেন ও দক্ষিণ গোবিন্দপুরের শামীম নিহত হওয়ার খবর তাদের বাড়িতে পৌঁছুলে নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিকটজনদের অনেকেই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। ট্রাকচালক হেলপার শামীম হোসেন অবিবাহিত হলেও ট্রাকচালক সাদ্দাম হোসেন মাত্র ছয় সাত মাস আগে আলমডাঙ্গার কুমারী গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের বছর ঘোরার আগেই বিধবা হলেন বধূ। মা হারালেন সন্তান। বোন হারালেন ভাই। এদের সান্ত¦না জানানোর ভাষাও যেন হারিয়েছেন প্রতিবেশিরা। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, সাদ্দাম ও শামীম আনুমানিক আড়াই মাস ধরে সিলেট এলাকায় ট্রাক নিয়ে অবস্থান করছিলো। মোবাইলফোনে বলেছিলো, দু একদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে ওরা। তার আগে এভাবে যে ওদের লাশ হতে হবে তা কে জানতো?