গ্রাম বাংলার প্রাচিন ঐতিহ্য ধরে রাখতে দামুড়হুদার তারানিপুরে দিনব্যাপি সাপের ঝাপান খেলা অনুষ্ঠিত

দামুড়হুদা প্রতিনিধি : সাপ ধরার কোনো মন্ত্র নেই। যদি মন্ত্রই থাকতো তাহলে সাপুড়েরা সাপের কামড়ে মারা যেতো না। বান-টান সব ভুয়া। দিলে সাহস আর কায়দা-কৌশলই হচ্ছে সবকিছু। কোনো ওঝার কাছে নয়, সাপে কামড় দিলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দামুড়হুদার তারানিপুরে সাপের ঝাপান খেলা করতে আসা আলমডাঙ্গার আসমানখালী নান্দবারের সাপুড়ে কিতাব আলী উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি আরও বলেন, আমি দির্ঘদিন ধরে সাপ ধরি। একটি সাপের ৬ পাটিতে মোট ৭২ টি দাঁত থাকে। এর মধ্যে বিষাক্ত দাঁত হচ্ছে ১০ টি। ওই বিষাক্ত দাঁতগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১৫-২০ দিন পর পর টেপন দিয়ে বিষ ফেলে দিতে হয়। সাপের ঝাপান খেলা হলে আমি সাপ ভাড়া দিই। এখানে আমি ও দরবেশপুরের আইনদ্দিন মোট ২০ টি সাপ নিয়ে এসেছি। আয়োজকরা জানালেন, সাপের ঝাপান গ্রাম বাংলার একটি প্রাচিন ঐতিহ্য। কালের বিবর্তণে এটা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন আর আগের মত সাহসী সাপুড়েও নেই। আয়োজকও নেই। ফলে সাপের ঝাপান খেলাও ঠিকমত হয় না। বছর পাঁচেক আগে সাপের ঝাপান খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে আকুন্দবাড়িয়ার আয়ুব সাপুড়ে ঝাপান মঞ্চেই মারা যায়। এ ছাড়া ৩ বছর আগে একই গ্রামের রায়হেন নামের আরেক সাপুড়েও সাপের কামড়ে মারা যায়। বর্তমানে এলাকার মধ্যে গাদঘাটার আলতাফ সাপুড়েসহ হাতে গোনা কয়েকজন সাপুড়ে আছে। এরাই গ্রাম বাংলার পুরোনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। ঝাপান মঞ্চে একসাথে ১৫-২০ টি সাপ ছেড়ে দিয়ে ঢোলের তালে তালে নাচছিল আলতাফ সাপুড়েসহ তার দলের তারানিপুরের নজরুল এবং মান্নান, গাঈদঘাটার নেহের, মাখালডাঙ্গার মুকুল এবং দর্শনার নজির।
অপর দিকে, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-ধলাগ্রাম থেকে আগত দলে ছিলেন সুজাল, শরীফুল, নাজিম উদ্দীন, ছানোয়ার, হাশেম এবং নবীছদ্দিন। তারানিপুর গ্রামবাসির আয়োজনে দিনব্যাপি ওই সাপের ঝাপান খেলা শত শত নারী-পুরুষকে উপভোগ করতে দেখা গেছে। তারানিপুরের তোতা, রুবেল, আপান, আমিনুল, নাজমুল, মোবারকসহ বেশকিছু যুবক প্রতিটি বাড়ি থেকে চালসহ নগদ টাকা সংগ্রহ করে ওই ঝাপান খেলার আয়োজন করেন।

Leave a comment