পদ্মায় নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ ৩ দিন পর ভেসে উঠলো

দামুড়হুদার ঠাকুরপুরে বেদনা বিধূর পরিবেশে সোহাগের দাফন
কুড়–লগাছি/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ পুলিশ সদস্য সোহাগের লাশ অবশেষে ৩ দিন পর ভেসে উঠলো। নিখোঁজ হওয়ার স্থান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার অদূরে গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে একটি নৌকাবাহির কিছু লোকজন তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের খবর দেন। লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসার পর বেলা ১১টার দিকে প্রথম জানাজা হয় মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মাওয়া পুরোনো ঘাট নৌ পুলিশ ক্যাম্পে। জানাজা শেষে সোহাগের লাশ পরিবারের কাছে হস্থানন্তর করে পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিবারের লোকজন ও মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যরা লাশ নিয়ে সোহাগের গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত ৮টার দিকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সোহাগের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য উৎসক জনতার ভিড় জমতে থাকে কিন্তু লাশ দেখানোর কোনো পরিবেশ না থাকায় লাশ কাউকে দেখাইনি। লাশের চারিদিক থেকে কান্নার রোল পড়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঠাকুরপুর কবরস্থানে হাজার হাজার মুসল্লিদের উপস্থিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার কুড়–লগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলামের ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র সন্তান সোহাগ ছিলেন দ্বিতীয়। গত ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পান তিনি। চাকরি পাওয়ার পর সোহাগ বিয়ে করেন খুলনা চুপনগর আব্দুর রহমানের মেয়ে তানজিলাকে। তার আছে ২ বছরের এক পুত্র সন্তান। সোহাগ মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মাওয়া পুরাতন ঘাটে নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সহকর্মীদের সাথে নদীতে গোসল করতে যান। সহকর্মীরা গোসল সেরে নদী থেকে ওপরে উঠলে সোহাগ নিখোঁজ হয়ে যায়। সোহাগ ডুব মেরে না উঠলে সহকর্মীরা আবার পানিতে নেমে তাকে খোঁজাখুজিঁ করতে থাকেন। তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে নৌ-ফাঁড়িতে এসে সোহাগের নিখোঁজের খবর জানান। খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সাথে সাথে খবর দেয়া হয় স্থানীয় ফায়ারসার্ভিসকে। সার্র্ভিসের ডুবুরীরদল পানিতে নেমে খোঁজাখুজি শুরু করে। দীর্ঘ তিনদিন খোঁজাখুজিঁর পর কোনো সন্ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে উদ্ধারকারীদল। অনিশ্চতার প্রহর গুনতে থাকে সোহাগের স্বজনরা। অবশেষে ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেলো সোহাগের মৃতদেহ। একটি মাছধরার টলারের লোকজন ভাসমান লাশ দেখে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। পরে পুলিশ নদী থেকে সোহাগের মৃতদেহ উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছুলে শুরু হয় কান্নার মাতম। গতকালই রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে বেদনাবিধূর পরিবেশে সোহাগের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে লৌহজং মাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শরিফুলের নেতৃত্বে লাশবাহী গাড়ি সোহাগের নিজ গ্রামে পৌঁছায় এবং তার স্ত্রী তানজিলা, চাচা শহিদুল এবং শফিকের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। তিনি বলেন, মাওয়া শিমলীয়া ৩ নং ফেরী ঘাটের ড্রেজারের পাইপের সাথে আটকে ছিলো সোহাগের লাশ। ড্রেজারের পাইপ সরালে সোহাগের মৃতদেহ ভেসে ওঠে।
এদিকে সোহাগের শোকসপ্ত পরিবারের প্রতি সমাবেদনা জ্ঞাপন করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, মুন্সিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. জায়েদ, দামুড়হুদা উপজেলা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ, মো. ফখরুল আলম খান, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও কুড়–লগাছি ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. এনামুল করীম ইনু।

Leave a comment