মা ক্যান্সার আক্রান্ত, বাবা দরিদ্র ভ্যানচালক। মায়ের ওষুধের জোগান আর সংসারে কিছুটা সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়েই দিন-রাত খাটতো ছেলে কামরুল ইসলাম। ভাড়ায় নেয়া অটো চালিয়ে বেশ ভালোই রোজগার হচ্ছিলো তার। প্রতিদিনের মতো গত ২৮ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। অটো নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়ায়। এরপর কখন যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে সে তা হয়তো ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। পরদিন আলমডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জিকে ক্যানালে পাওয়া গেলো লাশ। শোক সাগরে ভাসলো চুয়াডাঙ্গা শহলতলী দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার হতদরিদ্র পরিবার। ছেলে খুন হওয়ার ৯ দিনের মাথায় মাও মারা গেলেন।
যে মায়ের ওষুধের জোগান দিতো যে ছেলে, সেই মা ওষুধের জোগান না পেয়ে নাকি সেই ছেলে হারানোর শোক সহ্য করতে না পেরে মারা গেলেন? জবাব যাই হোক, এটা যে আমাদের সমাজেরই চিত্র তা অস্বীকার করার জো নেই। দারিদ্র্য দূর করার লড়াই চলছে। সফলতাও মিলেছে অনেক। এখন আর অতোটা নিরান্ন বা অনাহারিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যতোটা আগে পাওয়া যেতো। সে হিসেবে সমাজ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছে বললে নিশ্চয় ভুল হয় না। এই লক্ষ্যে পৌঁছুনোর গতি আরো বাড়তো যদি সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবো।
বহু সচ্ছল পরিবার অভাবের অথই সাগরে পড়ে সুচিকিৎসা না পেয়ে দিগগি¦ক ছুটে। অথচ সুচিকিৎসা পাওয়া দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। একই সাথে প্রত্যেকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত পুলিশ। পুলিশকে সহযোগিতার জন্য রয়েছে বহু সংস্থা। এরপরও জনমালের নিরাপত্তা পদে পদে বিঘিœত হয়, হচ্ছে। কেন? শুধুই কি পুলিশে অপ্রতুলতা? অপ্রতুলতাই তো, সেটা লোকবলে কিংবা নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতার ক্ষেত্রেও হতে পারে। যাই হোক, পুলিশে অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতেই হবে। ঘরে বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে বাধ্য।
চুয়াডাঙ্গায় মাঝে মাঝেই শ্যালোইঞ্জিনচালিত হরেক নামের অবৈধযান ও ব্যাটারিচালিত অটো চুরির পাশাপাশি ছদ্মবেশে যাত্রীবেসে চালককে খুন করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এটা রোধ অনেকটা কঠিন হলেও অসম্ভভ নয়। চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ের কামরুল ইসলামকে হত্যা করে অটো ছিনিয়ে নিয়ে সটকানো চক্রের এক সদস্য গতকাল ধরা পড়েছে। এর আগে উদ্ধার হয়েছে অটো। চালককে খুন করে পালানো ছিনতাইকারীদের সকলকে দ্রুত ধরে আইনে সোপর্দ করতে পারলে অবশ্যই এ ধরনের খুন ছিনতাই হ্রাস পাবে। ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যে অটো উদ্ধার ও খুনি ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হওয়া পুলিশ অফিসারকে অভিনন্দন।