জীবননগর আন্দুলবাড়িয়ার কর্চ্চাডাঙ্গায় গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অল্পের জন্য ব্যর্থ হলেও চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়িতে সফল
স্টাফ রিপোর্টার: সপ্তাহজুড়ে ডাকাতদলের পিছু নিয়ে পরশু রাতে পুলিশ কিছুটা কাছে পেলেও ফঁসকে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আর ফঁসকানোর সুযোগ দেয়নি চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশ দল। একজন-দুজন নয়, আট আটজনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হিজলগাড়ি বাজারের একটি হোটেল থেকে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গোপন সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন নিজেই ওই ডাকাতদল পাকড়াওয়ের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ দলকে সরাসারি নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
গতরাত ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার গ্রেফতারকৃত ৮ জনকে সামনে নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এরাই পরশু রাতে জীবননগরের কর্চ্চাডাঙ্গা লাইনপাড়ার দুটি বাড়িতে ডাকাতির অপচেষ্টা চালিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। গোয়েন্দা পুলিশ দলকে ১০ রাউন্ড গুলিও করতে হয়। তবে গ্রামে গ্রামবাসী পাহারায় থাকার কারণে গুলি করতে হয়েছে সতর্কতার সাথে। সেই ডাকাতদলকে হিজলগাড়ি বাজারের জনগণের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি রো রোভার পিস্তল, গানপাউডার, ৮টি মোবাইলফোন, ৩ কেজি মার্বেল, টর্চলাইট ৪, ২ বান্ডিল সূতালি ও স্কচটেপ ৬টি। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঝিনাইদহ জেলার মহাশয়া গ্রামের আজিবর আলীর ছেলে কুরবান আলী (৩০), লোকমান আলী (২৪), একই গ্রামের জামাত আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৫), গোপালপুর গ্রামের এলেম ম-লের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪), কোটচাদপুর রুদ্রনগর গ্রামের আফজাল ম-লের ছেলে লালচাঁদ (২৮), আসাদুল ইসলামের ছেলে সোহানুর রহমান (২৫), কলম আলীর ছেলে আকিমুল ইসলাম (২৫) ও লালমনিরহাট জেলার ভাটিবাড়ি গ্রামের জামিনুর রহমানের ছেলে শহিদুল ইসলামকে (২৪)।
জানা গেছে, নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন সপ্তাহখানেক আগে জানতে পারেন, আন্তঃজেলা ডাকাতদলের বেশক’জন সদস্য এলাকায় প্রবেশ করেছে। পুলিশ সুপার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইব্রাহিম আলী, এসআই আশরাফ বিশ্বাসসহ সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। ডাকাতদল ধরতে গোপন তথ্য সংগ্রহের ওপর বেশি বেশি গুরুত্ব দেয়ার একপর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, সোমবার রাতে জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়ার কর্চ্চাডাঙ্গা লাইনপাড়ার সৈয়দ আলী ও আলী আহম্মেদের বাড়িতে ডাকাতি করতে পারে। এ তথ্য পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ দল পরশু রাতে ডাকাত গ্রামে ঢোকার আগেই ওই বাড়ির লোকজনকে সতর্ক করে ডাকাতদল বাড়ি প্রবেশ করলে ভয় না পেয়ে কি করতে হবে সে সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। গোয়েন্দা পুলিশ ডাকাতদল ধরার জন্য পাশেই অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১০-১২ জনের একদল ডাকাত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই বাড়ির দিকে এলে গ্রামে পালাক্রমে পাহারায় নিয়োজিতরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ডাকাতদল পিছু হটে। গোয়েন্দা পুলিশ ডাকাতদলের পিছু নেয়। পরপর ১০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ডাকাতদলের দিকে না ছুড়ে গুলি ওপরে ছোড়া নিয়ে গ্রামপাহারাদারদের মধ্যে বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়। গতকাল সকালে কর্চ্চাডাঙ্গা গ্রামবাসী পিস্তলের ১টি তাজা গুলি, ২টি খোসা ও ৬টি বোমাসদৃশ্য বস্তু দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। জীবননগর থানা পুলিশ বোমা উদ্ধার করতে গড়িমসি করায় বেলা দেড়টার দিকে ডিবি পুলিশের এসআই আশরাফ বিশ্বাস সঙ্গীয় ফোর্সসহ ৪টি বোমা উদ্ধার করেন। পিস্তলের ১টি তাজা গুলি ও ২টি খোসা গ্রামবাসী ইউপি চেয়ারম্যানের হেফাজতে দিয়েছে। অপর ২টি কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো বোমাসদৃশ্য বস্তু বাজদিয়া সড়কের ধারে পড়ে থাকতে দেখেছে বলে এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে।
পরশুরাতের ঘটনা বিস্তারিত জানতে আমাদের আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি সরেজমিনে কর্চ্চাডাঙ্গা লাইনপাড়ার মৃত আব্দুর রাজ্জাক প্রধানের ছেলে আলী আহম্মদের বাড়ি গেলে তিনি বলেন, রাত ১০টার দিকে ২০-২৫ জন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার স্ত্রী বিউটি খাতুনকে বলেন, আপনাদের বাড়িতে ডাকাতি হবে। গোপন সংবাদ পেয়ে আমরা ডাকাত ধরবো। ডাকাতদল আসলে বলবেন আমাদের মারবেন না, টাকা পয়সা ও গয়নাগাটি যা আছে তা দিয়ে দেবেন। এ কথা বলে আমার, সৈয়দ আলী পাটোয়ারী, বিউটি খাতুন ও আব্দুস সাত্তারকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রেখে মোবাইলফোন নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ ১টি হেঁসো ও ১টি টর্চলাইট বাড়ির সদস্যদের নিকট থেকে নিয়ে নেয়। আমাদের ঘরের মধ্যে নিয়ে ১টি দরজা খুলে রেখে সব দরজা বন্ধ করে দিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী সদস্যরা বাড়ির আশপাশে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত ধারালো দা ও টর্চলাইট হাতে ৭-৮ জনের ডাকাতদল বাড়ির গেটে প্রবেশ করলে রাতকালীন গ্রাম পাহারাদাররা প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুখোমুখি হয়। গ্রামপাহারা দলের সদস্য শাহীন, খোকা, হান্নান ও আব্দুস সাত্তার অভিন্ন ভাষায় বলেন, ডিবি পুলিশ আমাদের কথিত ডাকাতদলের পেছনে যেতে বাধা দেয়।
এদিকে আমাদের বেগমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইব্রাহীম আলী, আশরাফ বিশ্বাস ও জগদীশ চন্দ্র বসু সঙ্গীয় সদস্যদের নিয়ে ঝটিকা অভিযান চালান হিজলগাড়ি বাজারে। বাজারের সংগ্রাম হোটেলে ডাকাতেরা অবস্থান করছে এ রকম সংবাদের ভিত্তিতে ওই হোটেলে চালানো হয় অভিযান। হোটেল থেকে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি পিস্তল, ১শ গ্রাম গানপাউডার ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তোজাম্মেল হক। গোয়েন্দার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে। যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতরাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে পুলিশ সুপার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) তরিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কলিমুল্লাহ ও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আহসান হাবীব, ডিবির পরিদর্শক নাজমুল হাসানসহ পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।