চুয়াডাঙ্গার গড়াইটুপি এলাকায় রমরমা সুদের কারবার- সুধকারবারীদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা

বেগমপুর প্রতিনিধি: এক সময় দাদন ব্যবসায়ীরা ধারে নগদ টাকা, ধান, গমসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল দরিদ্র মানুষের মধ্যে শর্তসাপেক্ষে দিতো। শর্তপূরণে ব্যার্থ হলে মহাজনরা তাদের লোকজন দিয়ে জমি, হালের বলদ, বাড়ির আসবাপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল জোরপূর্বক কেড়ে নিতো। বর্তমানে দাদন ব্যবসার পরিবর্তে সমিতির নামে অথবা ব্যাক্তিগতভাবে চড়া সুদে নিরুপায় মানুষের মধ্যে গোপনে বা প্রকাশ্যে টাকা লগ্নি করে থাকে এক শ্রেণির সুদকারবারীরা। তেমনি একজন চড়া সুদকারবারীর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরি গ্রামের মহিদুল কসাই। তার চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের বেড়াজালে পড়ে অনেকেই হয়েছে নিঃস্ব। দশগুণ টাকা পরিশোধ করার পরও মূলটাকা কোনোভাবেই শোধ হচ্ছে না সুদ কারবারীদের ফাঁদে পড়া মানুষগুলোর। বিষয়টি নিয়ে গড়াইটুপি বাজার এলাকায় বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।

অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদরের গড়াইটুপি বাজার এলাকায় রয়েছে একাধিক মহাজনি চড়া সুদকারবারী সমিতি অথবা ব্যক্তি। কথিত এসব ব্যক্তিদের নিকট থেকে সংসারের অভাব অনটনে পড়ে দরিদ্র মানুষ টাকা ঋণ নিয়ে থাকে। ঋণের টাকা পরিষোধ করতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। ঋণের টাকা দশগুণ হারে সুদ পরিষোধ করার পরও কোনোভাবেই ধার যেন শোধ হয় না গরিব মানুষগুলোর। কারণ লেনদেনটা হয় অতিগোপনে। পরিশোধ করতে গেলে তখন হয় লোক জানাজানি। তেমনি এক মহাজন হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরি গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মহিদুল (গরু-ছাগলের মাংস বিক্রেতা) কসাই। মহিদুলের নিকট থেকে গত ৪ মাস আগে ২৭ হাজার টাকা সুদের ওপর নিয়েছেন তেঘরি গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে জিবরাইল। তিনি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে জানতে পারেন তাকে ২৭ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫৪ হাজার টাকা দিতে হবে। এমন কথায় মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে তার। উপায়ন্ত না পেয়ে দিন দশেক আগে সুদের ১৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে মহিদুলকে। বাকি টাকার জন্য নানাভাবে চাঁপ দিচ্ছে তাকে। এমন কি বাজারে আসলে টাকার জন্য জিবরাইলকে বেঁধে রাখারও হুমকি দিয়েছে মহিদুল। তাই বাকি টাকার ব্যবস্থা না করে জিবরাইল বাজারে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। জনশ্রুতি রয়েছে গড়াইটুপি বাজার পাড়ার নালু কায়স্তর ছেলে সন্তোশ দে গত এক বছর আগে সাড়ে ১২ হাজার টাকা সুদের ওপর নিয়েছিলেন মহিদুলের নিকট থেকে। সে টাকা বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার টাকায়। এরইমধ্যে সন্তোশ গরু বিক্রি করে মহিদুলকে ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা না দিতে পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

সন্তোশ ভীতকণ্ঠে বলেন, আমি খুবই গরিব মানুষ। আমার সাথে মহিদুলের যে লেনদেন ছিলো মিটেগেছে। তেঘরি গ্রামের বুধোমাঝি নিয়েছিলেন ৪৫ হাজার টাকা। বাড়ির ৩ শতক জমির মধ্যে ২ শতক জমি ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মহিদুলের টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মহিদুলের সুদের লেনদেন নিয়ে গড়াইটুপি বাজার এলাকায় বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। অনেকেই বলেছেন গরিব মানুষের অসায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চড়াসুদের খড়গ চাপানোটা ঠিক হয়নি।

এ ব্যাপারে মহিদুল কসাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্তোশ আমার নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছিলো। এমন কারবার এখানে নামে বে-নামে অনেকেই করে। আমি একা না। যতোটা শুনছেন ততোটা না। আপনার সাথে দেখা করে সাক্ষাতে সব বলবো।

 

Leave a comment