চুয়াডাঙ্গায় তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত

সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুঘটনা

আলম আশরাফ: দেশে দিন দিন উদ্বেগজনকহারে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। আমাদের দেশে বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হার। বছরের এমন কোনোদিন নেই যে এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে না। পত্রিকার পাতায় বা ইলেকট্রিক মিডিয়ার খবরে তার প্রমাণ মিলছে। প্রতিদিন যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে আমাদের দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন দিন দিন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মানুষজনকে সড়ক-মহাসড়কে চলতে হচ্ছে। এ সব দুর্ঘটনা অবৈধযান আলমসাধু, নসিমন, করিমন ও লাটাহাম্বরের সাথে যোগ হয়েছে পাউয়ারটিলার ট্রলি। দেশের কোথাও না কোথাও সড়কে ঘটছে এধরনের দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে খুব একটা তৎপর হতে দেখা যায় না। তাই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং এ দেশের সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনায় তাদের আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গায় গত তিন মাসে ২৩ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪১ জন। এর মধ্যে গত ২৬ মার্চ দামুড়হুদার জয়রামপুর স্কুলবটতলা নামকস্থানে ট্রাক-আলমসাধুর মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ১১ জন। নিহতরা হলেন বড় বলদিয়া গ্রামের  ইজ্জত আলী, আবদার রহমান, বিল্লাল হোসেন, আকুব্বার আলী নজির হোসেন, শান্ত হক, হাফিজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, লাল চাঁদ আলী, জজ মিয়া ও শাহীন আলী।

২৭ মার্চ দামুড়হুদার কালিয়াবকরিতে পাউয়ারটিলার উল্টে চালক নিহত হন। ২৫ মার্চ দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় ইটবহনকারী পাউয়ারটিলামের নিচে চাপা পড়ে দুলু মিয়া নামের এক জন নিহত হন। তিনি পীরপুরকুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা। ২৪ মার্চ দর্শনা মিলগেটের কাছে মোটরচালিত ভ্যান থেকে পড়ে এক নারী মারা যান। ২৩ মার্চ জীবননগর গোয়ায়পাড়া পাউয়ারটিলারে নিচে চাপা পড়ে শাওন হোসেন নামের দু বছরের এক শিশু মারা যায়। শাওন ওই গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে। ১৮ মার্চ জীবননগর উথলীতে পাউয়ারটিলার চাপায় ইভা খাতুন নামের এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। সে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইন্তাজুল ইসলামের মেয়ে। ১২ মার্চ দামুড়হুদার লোকনাথপুরে ট্রাক্টরের ধাক্কায় জাহিদুল ইসলাম নামের একজন নিহত হন। তিনি দর্শনা দক্ষিণচাদপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সাবেক পৌর কাউন্সিলর। একই দিন আলমডাঙ্গার শ্রীরামপুরে ভটভটি উল্টে একজন সবজি ব্যবসায়ী মারা যান। ১০ মার্চ দামুড়হুদার আরামডাঙ্গায় ও জীবননগর সন্তোষপুর এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়। এ দিন দামুড়হুদার ঠাকুরপুরের স্কুলছাত্র ইছানুল ইসলাম আরামডাঙ্গায় ট্রাক্টরের চাপা নিহত হয়। একই দিন জীবননগর সন্তোষপুরে বাসচাপায় অনন্তপুর গ্রামের শাহিন নামের এক যুবক মারা যান। ৫ মার্চ আলমডাঙ্গার বণ্ডবিলা এলাকায় বাসের ধাক্কায় আলমসাধু চালকসহ তিনজন নিহত হন। এরা হলেন খোরদ গ্রামের মিনারুল ইসলাম, হারদিদাসপাড়ার জসিম উদ্দিন ও কলেজছাত্র দুর্গাপুরের নিয়ন হোসেন। ৪ মার্চ চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়ে ট্রাক্টর চাপায় ওহিদুল ইসলাম নামের এক ইউপি সদস্য নিহত হন। তিনি রুইতনপুর গ্রামের শফি উদ্দিনের ছেলে এবং চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ৩ মার্চ দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলায় গরুবাহী লাটাহাম্বার ভেঙে আরিফ নামের এক যুবক মারা যান। তিনি আলমডাঙ্গার কৃষ্ণপুর গ্রামের ছেলে। ২ মার্চ দামুড়হুদায় করিমন-মোটরসাইকেলে সংঘর্ষে জয়রামপুরের আব্বাস উদ্দিন নিহত হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরিফ হোসেন নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি ঝিনাইদের খাজুরা গ্রামের মৃত আজিবর মণ্ডলের ছেলে। ২৪ ফেব্রুয়ারি  আলমডাঙ্গার রোয়াকিুল গ্রামের ট্রাকের ধাক্কায় সানোয়ার হোসেন নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামের সুন্নত আলীর ছেলে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গার রেল ফোকটের অদুরে লাটাহাম্বরের ধাক্কায় গোবিন্দপুরের কিশোর হারুন মারা যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি দামুড়হুদার নাপিতখালীতে আলমসাধু-মোটরসাইকেলে সংঘর্ষে চামেলী খাতুন নামের এক নারী মারা যান। ২৭ জানুয়ারি জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী বাজারে বাসচাপায় একতার পুরের শহীদ হোসেন নিহত হন। ২০ জানুয়ারি আলমডাঙ্গা বাসটার্মিনালে বাস চাপায় রেজাউল হক নামের এক পান ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি পাশ্ববর্তী হরিণাকুণ্ডু উপজেলা গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। আলমডাঙ্গার খুদিয়াখালীতে আলমসাধু  উল্টে আব্দুল জলিল নামের একজন মারা যান। তিনি সরোজগঞ্জ জুগিরহুদা গ্রামের বাসিন্দ। ৮ জানুয়ারি দামুড়হুদার কোমরপুরে পাউয়ারটিলার ও খোয়াভাঙ্গা মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কার্পাসডাঙ্গা ভূমিহীনপাড়ার রিপন মারা যান। ৪ জানুয়ারি জীবননগর আন্দুলবাড়িয়া রেলগেটে ট্রেনের ধাক্কায় লাফি নামের এক শিশু মারা যায়।

এবিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চুয়াডাঙ্গা সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষিকাজের জন্য ট্রাক্টর ও পাউয়ারটিলার ব্যবহারের শর্ত থাকলেও এগুলো অবৈধভাবে মহাসড়কে ইট, বালু ও মাটি বহন করছে। মাটি বহনের সময় তা রাস্তায় পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদামাটিতে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি চালক অদক্ষ হওয়ায় এসব যানের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রয়োজনে তারা অবৈধ এসব যানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন।

জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে শতাধিক ভাটা রয়েছে। ভাটাগুলো মাটি, বালু, ইটসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনে পুরোপুরিই ট্রাক্টর ও পাউয়ারটিলার চালিত ট্রলির ওপর নির্ভরশীল। গড়ে প্রতিটি ভাটায় ২০টি করে এমন যান রয়েছে। সেই হিসেবে জেলার সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২ হাজারের বেশি ইটভাটার ট্রলি। আর এসব অবৈধযান বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণ। অথচ উচ্চ আদালত থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মহাসড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।