চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কুকুরের ভয়াবহ উৎপাত ॥ একদিনেই কামড়ের শিকার ২৮ জন

 

হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন ॥ দিশেহারা জনসাধরণকে ছুটতে হচ্ছে দিগি¦দিক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কুকুরের ভয়াবহ উৎপাত শুরু  হয়েছে। একের পর এক কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে শিশু-কিশোর নারি পুরুষ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আবাল-বনিতা। গতকাল একদিনেই কুকুরে কামড়ানো ২৭ জন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গত এক মাসে এ সংখ্যা সাড়ে ৩শ ছাড়িয়েছে। আর দু মাসে কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছে মোট ৮০৪ জন। আর এই দু মাসেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অধিকাংশকেই বাইরে থেকে চড়া দামে কিনতে হয়েছে। কখনো কখনো জেলায় না পেয়ে ছুটতে হচ্ছে দিগি¦দিক।

বহুদিন ধরে কুকুর নিধন বন্ধ। বহুগুণ বেড়েছে কুকুরের বংশবিস্তার। ওয়ারিশ বা বেওয়ারিশ কুকুরের কোনোটিরই প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না। ফলে ওইসব কুকুর ক্ষেপে একের পর এক কামড়াতে শুরু করেছে। গত দু মাসে চুয়াডাঙ্গায় প্রায় এক হাজার মানুষকে কুকুরে কামড়ালেও মৃত্যুর খবর অবশ্য গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল সোমবার একদিনেই চুয়াডাঙ্গায় ২৮ জন নারী-পুরুষ শিশু-কিশোরকে কুকুরে কামড়ানো খবর পেয়ে চমকে ওঠেছেন সচেতনমহল। গতকাল কুকুরে কামড়ানো রোগীদের অধিকাংশেরই বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী ও আলমাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ হৈদারপুর গড়গড়ি এলাকায়।

কুকুরে কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়। এ রোগের প্রতিষেধক  ইনজেকশন আগে ছিলো নাভিতে পর পর ১৪টি দিতে হতো। সেই প্রতিষেধক এখনও নাভিতে ১৪টিই দিতে হয়। তবে আধুনিকায়ন হয়েছে ওই প্রতিষেধকের এক সংস্কারে। কয়েক বছর ধরে হাসপাতালে সরবরাহকৃত প্রতিষেধক ৪ ডোজ দিতে হয়। প্রথম দিন দেয়ার তিন দিন, ৭ দিন ও ২৮ দিনের দিন দিলেই চলে। এ প্রতিষেধকের দামও বেশি। চিকিৎসক বলেছেন, ওই ভ্যাকসিন হাসপাতালে সরবরাহ না থাকলে বাইরে থেকে ৬শ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। আর যদি কুকুরের কামড়ের ক্ষত বেশি হয় এবং সেখান থেকে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ হয় তাহলে আরো একটি ইনজেকশন দিতে হয়। তার দাম এক হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি পৌরসভাসহ ৩৮টি ইউনিয়নে মোট কুকুরের সংখ্যা কতো? তার মধ্যে বেওয়ারিশ আর ওয়ারিশ কুকুর কতোটি? পরিসংখ্যান না থাকলেও শহরে এবং শহরতলীর রাস্তাগুলোতে অবস্থান নেয়া কুকুর দেখেঅনেকেরই অনুমান কয়েক হাজার কুকুর রয়েছে জেলায়। এসব কুকুরের কোনোটিরই পশুসম্পদ কার্যালয় থেকে মাত্র ২৫ টাকার বিনিময়ে সরবরাহকৃত ইনজেকশন দেয়া হয় না। ফলে ওয়ারিশ আর বেওয়ারিশ কি সকল কুকুরই বহন করছে ভয়ঙ্কর জলাতঙ্করোগের জীবাণু। কামড়ালেই বিপদ। এরকমই মন্তব্য করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার পাল বললেন, অনেকেই বাড়িতে কুকুর রাখেন। অথচ কুকুর পরিচর্যার নূন্যতম নিয়মটাও তারা জানে না, মানে না। বছরে একবার মাত্র ২৫ টাকার ইনজেকশন দিলেই ওই কুকুর পুরোবছর জুড়েই থাকে নিরাপদ। আর বেওয়ারিশ কুকুর? ওগুলোর আর কে দেবে ইনজেকশন? না আছে নিধন, না আছে কুকুরগুলোকে নিরাপদ রাখার কোনো উদ্যোগ। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন কয়েক মাস ধরেই সঙ্কট। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের অভিমত পূর্বের বরাদ্দকৃত সব ভ্যাকসিনই শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালের স্টোরকিপার হাদিউজ্জামান বললেন, বার বার ভ্যাকসিন চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ চুয়াডাঙ্গায় কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে ওই ভ্যাকসিন বরাদ্দ নেয়ার জন্য ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

Leave a comment