১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী দিনগুলোতে ভোট ব্যবস্থার ওপর জনগনের আস্থা ফিরিয়ে আনার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দায়িত্ব পড়েছে নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা পূরণের মূল কারিগরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের। সামনে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীন হলেও যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত তারা। যে কোন নির্বাচনে কোন দল বা দলীয় নির্দেশনার কাছে মাথা নত করবে না কমিশন। সাংবিধানিক এই দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালনে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। নতুন ইসির উদ্দেশে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব, দেশের দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমি আশা করছি আন্তরিকতা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে নতুন ইসি।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সর্বশেষ তিনবছর দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার ওপর জনগনের এক ধরনের অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কাজী রকিব কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নষ্ট, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি সংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করার অভিযোগ রয়েছে। রকিবউদ্দীন কমিশনের অধীনে হওয়া বিভিন্ন নির্বাচনে গোলযোগ-সহিংসতার পাশাপাশি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। শুধু ইউপি নির্বাচনেই শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি হয়। আলোচনা-সমালোচনা মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে রকিব কমিশনের। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাতে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ সদস্যের কমিশনকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি চ্যালেঞ্জ হলো কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরানো এবং ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। একইসাথে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাটিয়ে সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণ, স্মার্টকার্ড বিতরণ ও ইভিএম ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নতুন কমিশনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নতুন ইসিকে সবার আগে ভোটের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন-সেই পথে যেতে হবে নতুন কমিশনকে। আমরা চাই, আগামীতে সব দল নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক ড. আবদুল আলিম বলেন, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বিদায়ী কমিশনের মেয়াদের শুরুতে ২০১৩ সালের চার সিটি এবং শেষে এসে ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ছাড়া সব ভোটই প্রশ্নবিদ্ধ। আর এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর দেশের মানুষের আস্থা কম। ভোটের ওপরে মানুষের আস্থা অর্জন করাই হবে নতুন কমিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিটি কাজকে চ্যালেঞ্জ মনে করি। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারা ব্যর্থতা। আশা করি সবার সহযোগিতায় সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবো আমরা।
নতুন ইসির শপথ ১৫ ফেব্রুয়ারি: প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ওই দিন বিকেল ৩টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পড়াবেন। কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদত হোসেন চৌধুরী। বিদায়ী কমিশনের প্রধান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ করবেন। স্বাধীনতার পর ইসির নিজস্ব ভবনে ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলেই যাত্রা শুরু হবে নতুন কমিশনের।