রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন ইসির তালিকা আজই হস্তান্তর

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটি আজ সোমবার তাদের প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করবে। এ জন্য সার্চ কমিটির সদস্যরা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে বঙ্গভবনে সাক্ষাত্ করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন সার্চ কমিটির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সার্চ কমিটির সদস্যরা বিকাল ৫টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নিজেদের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠক করবেন। এই বৈঠকেই ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাবেন। এরপরই রাষ্ট্রপতি আগামীকাল মঙ্গলবার একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। সেটির আদেশও মঙ্গলবার জারি হতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার নতুন কমিশনের শপথ হতে পারে এবং ওইদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিনজন কমিশনার যোগ দেবেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। কমিটির ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে ইসি গঠনের জন্য সুপারিশ করা ১০ জনের নাম দেয়ার কথা।

সার্চ কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সোমবারের বৈঠকে সুপারিশ করা লোকজনের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন তারা। ওই সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করা ব্যক্তিদের নাম তুলে দেবেন। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠকের আলোচনার ওপর একটি সংক্ষিপ্ত সার রাষ্ট্রপতির কাছে দেবেন তারা। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রথমত, আবশ্যিকভাবে তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। এছাড়া দক্ষতা, সততা, দল নিরপেক্ষ  এবং বয়স অবশ্যই ৭০ বছরে নীচে হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর দেশে এই প্রথমবারের মতো কাউকে নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে আনার সুপারিশ করা হচ্ছে যিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চাকরিতে যোগ দেওয়া কোনো আমলা। কমিশনে আইনজ্ঞ নারী কমিশনার ছাড়াও বিষয় বিশেষজ্ঞ বিশিষ্টজনদের প্রতিনিধিত্ব রাখার সুপারিশও করতে পারে সার্চ কমিটি।

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি এখন পর্যন্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। তারা চাইছেন, ইসি পুনর্গঠনে যাতে বড় ধরনের কোনো অভিযোগের আঙুল কেউ তুলতে না পারেন। সে জন্য যেসব দল তাদের কাছে নাম দিয়েছে তা থেকে উল্লিখিত যোগ্যতার মধ্যে পড়ে তাদেরকে বাছাই করে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন। কারো বিরুদ্ধে একজনের আপত্তি থাকলে সেটি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। সার্চ কমিটিতে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার।

সূত্র অবশ্য বলছে, দলীয়ভাবে নেয়া নামের বাইরেও সার্চ কমিটি এক থেকে দুই জনের নাম সুপারিশ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা, আবুল কাশেম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কলামিস্ট আলী ইমাম মজুমদার ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদের নামই শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে থেকে যে কোনো দুইজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদে সুপারিশকৃত হতে পারেন। তবে শেষপর্যন্ত এদুইজন কে হবেন সেটি সার্চ কমিটির আজ অনুষ্ঠেয় সর্বশেষ সভার পরে জানা যাবে। নির্বাচন কমিশনার পদে বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের সাবেক একজন সচিব, শিরিন কবিতা আখতার এবং কবিতা খানমের মধ্যে একজনের নাম সুপারিশ করা হতে পারে। পুলিশ থেকে কাউকে কমিশনার পদে রাখার বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাখা হবে। থাকছেন নির্বাচন সংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ, সাবেক অধ্যাপক।

সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো দেওয়া ১২১টি নাম থেকে যে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন এসেছে। কমিটি সদস্যরা কিছু যোগ্য ব্যক্তির নাম সংযোজন করেছেন। রাজনৈতিক দল ও নিজের সংযুক্ত নামগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেছে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্চ কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশকৃত নাম প্রকাশ করা হবে কী না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকালের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত হতে পারে। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি তাদের প্রথম বৈঠক থেকে ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচজন করে ব্যক্তির নাম চেয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৫টি রাজনৈতিক দল ১২১টি নাম প্রস্তাব করেছিল। নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন।

উল্লেখ্য, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ও অন্য তিন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। শুধু পরে যোগদান করায় নির্বাচন কমিশনার মা. শাহ নেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে নিয়মানুযায়ী, বিদায়ের আগের দিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন সিইসি ও অন্য কমিশনাররা।

Leave a comment