সন্ধ্যারাতে মা-মেয়েকে ঘরে বেঁধে ডাকাতি : হাতেনাতে আটক মিনালকে পিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ

চুয়াডাঙ্গার নীলারমোড়ে সাতদিন ধরে গতিবিধি দেখে গুলশানপাড়া এলাকার ৪ যুবক : সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকেই অস্ত্র ধরে গলায়  

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সুমিরদিয়া নীলার মোড়ের একটি বাড়িতে সন্ধ্যারাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র ডাকাতরা মা-মেয়েকে বেঁধে তাণ্ডব চালায়। পালানোর সময় এক ডাকাত সদস্য হাতেনাতে ধরা পড়েছে। পালিয়েছে তিনজন। ছাদ থেকে লাফ মেরে হাতেনাতে ধরাপড়ার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চুয়াডাঙ্গা গুলশানপাড়ার আবদুল্লাহ আল মিনাল তার অপর তিন সহযোগীর নামধাম বলেছে। গতরাতে মাহমুদুন নবী জান্টু তরফদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পলাতকদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ।

ডাকাতির অস্ত্রাঘাতে আহত গৃহকর্তা মাহমুদুন নবী জান্টু তরফদার ও মেয়ে সেরিনা তরফদারকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। হাতেনাতে ধরাপড়া ডাকাত সদস্য আব্দুল্লাহ আল মিনালকে (২১) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। সে হাসপাতালের অদূরবর্তী গুলশানপাড়ার শামসুল আলম ফুলমিয়ার ছেলে। ফুল মিয়া কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ডাকাতি করতে গিয়ে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরাপড়া আব্দুল্লাহ আল মিনাল ভোকেশনালে পড়তো। গতবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করে। এরপর থেকেই সে উড়নচণ্ডি। মাঝে হাসপাতালে এক রোগীকে মারধর করে আলোচনায় উঠে আসে। সে তার তিন সহযোগী ডাকাতের নাম বলেছে। এরা হলো- একই এলাকার সজিব, জুয়েল ও রুবেল।222

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সুমিরদিয়া নীলার মোড়ের বাসিন্দা মাহমুদুন নবী জান্টু তরফদার কেদারগঞ্জ বাজারের ইলেকট্রনিক্স দোকানি। তিনি স্থানীয় পোস্ট অফিসের মাস্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ফিরোজ রোডেও তার একটি বাড়ি রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর ওই ফিরোজ রোডের বাড়ি থেকে নীলার মোড়ের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন মাহমুদ্দুন নবীর জান্টুর স্ত্রী সেলিনা তরফদার ও মেয়ে ফাহমিদা তরফদার। নীলার মোড়ের বাড়িতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌঁছান মা-মেয়ে। এর কয়েক মিনিটের মাথায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে ৪ জনের একদল যুবক। বাড়িতে ঢুকেই মা ও মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারা। জমির দলিল কোথায় তা জানতে চায়। সোনার গয়না ও নগদ টাকা খুঁজতে শুরু করে। ঘরের আসবাবপত্র দ্রুত উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে। আনুমানিক আধাঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালানোতে থাকে ডাকাতরা। এক পর্যায়ে বাড়ির দরজায় পৌঁছান গৃহকর্তা মাহমুদুন নবী জান্টু তরফদার। তিনি বাড়ির গেটের বেল টিপতেই ভেতর থেকে অন্যরকম আওয়াজ পান। সন্দেহ হলে তিনি বাইরে থেকে ভেতরে টর্স লাইট মারেন। সব কিছু উল্টোপাল্টা দেখে তিনি দরজায় দাঁড়িয়েই চিৎকার জুড়ে দেন। এ সময় ডাকাতদলের কয়েক সদস্য সেখানে এসে তাকে মারধর শুরু করে। বাড়ির অদূরেই রয়েছে দোকান। দৃশ্য দেখে দোকানিসহ দোকানের সামনে থাকা কয়েকজন ছুটে আসেন। ডাকাতদল বাড়ির ভেতরে ঢুকে ছাদে ওঠে। তারা সেখান থেকে লাফ মেরে পালায়। তিনজন পালাতে পারলেও হাতেনাতে ধরা পড়ে একজন। তাকে ধরে পিটুনির পর পুলিশে দেয়া হয়।

মাহমুদুদ নবী জান্টু বলেছেন, বাড়ি থেকে ৪ ভরি ওজনের সোনার গয়না, দুটি মোবাইলফোনসহ একটি ল্যাপটপ ডাকাতি হয়েছে। কিছুদিন আগেই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়ের বিয়ের গয়না ডাকাতি হওয়ায় তার মা সেলিনা তরফদার পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘যেহেতু হাতেনাতে একজন ডাকাত ধরা পড়েছে, সেহেতু ওদের কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে হবে।’ তিনি ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় বলেন, ‘ওই ডাকাতরা বাড়িতে ঢুকেই একজনের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের সামনে আসে। দুজন বের করে পিস্তল। ঘরে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা আমাদের বেঁধে ফেলে। মুখে টেপ দিয়ে আটকে দেয়। যখন বাড়ির গেটে বেল বাজানোর শব্দ শুনি তখন জোর করে মুখ খোলার চেষ্টা করে গুঙিয়ে উঠি। একজন মুখ চেপে ধরতে গেলে তার হাতে কামড়ও বসিয়ে দিই।

হাতেনাতে ধরাপড়া আব্দুল্লাহ আল মিনাল ডাকাতির কথা স্বীকার করে বলেছে, ৭দিন ধরে ওই বাড়ির লোকজনকে ফলো করি। কে কখন কোথায় যায়-আসে তার গতিবিধি লক্ষ্য করি। আগে থেকে প্লান করি ‘সন্ধ্যায় যখনিওরা বাড়িতে ঢুকবে তখনই আমরা ডাকাতি করে দ্রুত সটকে পড়বো। একমই প্লান ছিলো। অথচ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলাম।

 

Leave a comment