স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার কারণেই কিশোর আব্দুল আজিজ (১৮) খুন হয়েছে। এ ঘটনায় সাইমুন (১৯) মনির (১৭) ও জুয়েল (১৬) নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নিহত আজিজরে মা শরিফা বেগম তেজগাঁও থানায় একটি মামলা (নম্বর-২৮) করেন। গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বুধবার দুপুর দুইটার দিকে তেজকুনিপাড়ার খোলাঘর খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আব্দুল আজিজ মারা যান। তিনি তেজগাঁওয়ে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তার বাবার নাম মো. বশির হোসেন। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার কুরেরপাড় গ্রামে তাদের বাড়ি।
তেজগাঁও থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, এলাকায় সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে পূর্ব শত্রুতা ছিলো। বুধবার সকালে নিহত আজিজের বন্ধু মফিজুল প্রতিপক্ষ দলের মনির নামে একজনকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়। পরে মনির, সাইমুন ও জুয়েল দুপুরে তেজকুনিপাড়ার খেলাঘর খেলার মাঠে এসে আজিজকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আজিজ সাইমুনকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় সাইমুনের হাত কেটে যায়। কিন্তু হাত কেটে গেলেও সে আজিজরে হাত থেকে ছুরি ছিনিয়ে নেয়। ছিনিয়ে নেয়া ছুরি দিয়ে সাইমুন আজিজরে মাথার পেছন দিকে আঘাত করে। আঘাতে আজিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করে রনি ও জসিম নামে দুই বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের সময় আজিজকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে প্রায় একই সময় মনির ও জুয়েল সাইমুনকে হাতের চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল ক্যাম্পের পুলিশ সাইমুন, মনির, জুয়েল এবং নিহত আজিজকে হাসপাতালে নিয়ে দুই বন্ধু রনি ও জসিমকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাইমুন, মনির ও জুয়েল ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ও ঘটনার বর্ণনা দেয়। পরে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাদেরকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। এছাড়া রনি ও জসিমকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে দুপুরেই ঘটনায় ব্যবহৃত খেলার ব্যাট ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে এসে রাতে নিহত আজিজরে মা শরিফা বেগম এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলায় সাইমুন, মনির ও জুয়েলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এদিকে নিহত আজিজের ভাগ্নে ওয়ালি উল্লাহ বলেন, আজিজ কিছুদিন লেখাপড়া করলেও ৫-৬ বছর ধরে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তেজকুনিপাড়ার রেলওয়ে কলোনিতে সে পরিবারের সঙ্গে থাকতো। আগের দিন ক্রিকেট খেলা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে বুধবার দুপুরে সাইমুনরা আজিজকে ডেকে নিয়ে মারপিট করে ও ছুরি মেরে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। আসামিরাও গ্রেফতার হয়েছে। আমরা সুবিচার চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দিদার হোসেন আদালত থেকে মানবকণ্ঠকে বলেন, সাইমুন, মনির ও জুয়েল আজিজ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তবে তাদের বয়সের কারণে পৃথক আদালতে হাজির করা হয়। এরমধ্যে জবানবন্দি দেয়ার পর সাইমুনকে কারাগারে পাঠানো হয়। আর মনির (১৭) ও জুয়েলকে (১৬) শিশু আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি দেয়া পর তাদেরকেও কারা হেফাজতে পাঠানো হয়।