হাওড়–বাঁওড় খাল–বিল অমৎস্যজীবীদের দখলে
দর্শনা অফিস: আদি মৎস্যজীবীদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিলগুলো এখন রয়েছে অমৎস্যজীবীদের দখলে। যার কারণে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের চরম দুর্দিন। খেয়ে না খেয়ে করছে মানবেতর জীবনযাপন। জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশা পাল্টিয়েও জোগাড় করতে পারছে না দু মুঠো ভাত। দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের পারকৃষ্ণপুর হালদার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৫০টি হালদার পরিবারের করুণ চিত্র। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কবে কখন তাদের পূর্ব পুরুষেরা এখানে বসতি গড়েছিলো তা এখনা কারোর মনে নেই। তবে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করাই ছিলো তাদের একমাত্র পেশা। পূর্ব পুরুষদের অনুস্মরণের মধ্যদিয়ে সেই পেশাকেই অবলম্বন করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। খানেকটা হঠাত করেই যেন পাল্টে গেলো সব। এখন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ওই সকল মৎস্য পেশাজীবীদের অধীনে নেই। জাল যার, জল তার এ স্লোগানকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ও অর্থের প্রভাব খাঁটিয়ে অমৎস্যজীবীরা এখন হালদারদের পেশা নিজের করে নিয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। ফলে তারা খেয়ে না খেয়ে কাটাচ্ছে দিন। মৎস্যজীবীদের দুর্দশা নিয়ে কথা হয় প্রবীণ মৎস্যজীবী মংলা হালদার, নারায়ণ হালদার, ঝড়ু হালদার, হবা হালদার ও বর্তমান প্রজন্মের মৎস্যজীবীদের মধ্যে সুকুমার হালদার, মধু হালদার বলেন, সেই ব্রিটিশ আমলে গঠিত ভৈরব ধিবর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমেই আমরা বিল-বাঁওড় লিজ নিয়ে মাছচাষ করতাম। পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে ২-১ জন সুবিধাবাদী মৎস্যজীবী প্রলোভনে পড়ে অমৎস্যজীবীদের সাথে তাল মিলিয়েছে। যে কারণে বঞ্চিত হয়েছে আমাদের ন্যায্য অধিকার। বহু চেষ্টা-তদবির করেও কোনো খাল-বিল লিজ নিতে পারেনি। তবে প্রভাবশালী অমৎস্যজীবীরা আমাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জলমহল লিজ নিলেও এতে আমাদের সামান্য পরিমাণে ভাগে থাকে না। এছাড়া পৌঁছুতে পারিনা জলমহালের ধারে-কাছে। পরবর্তীতে আমরা মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছ ধরে কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ স্রোতসীনি মাথাভাঙ্গা নদী এখন মাছশূন্য নদী বললে ভুল হবে না। তাই আমরা এখন অর্থাভাবে দারিদ্রের সাথে লড়াই করে একবেলা দু মুঠো খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বেঁচে আছি। কেউ কেউ আবার বাচার তাগিদে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে কিংবা দিনমজুরের কাজ করে সংসারের চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ওই সব মৎস্যজীবী তাদের বাপ-দাদার পেশায় ফিরে যেতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের সু-নজর দাবি করেছে।