চুয়াডাঙ্গা পুলিশ হেফাজত পচছে দু শতাধিক মোটরসাইকেল

 

অধিকাংশই চোরাই : মামলা নিস্পত্তি না হাওয়ার কারণে হচ্ছে না নিলাম

রহমান রনজু/আলম আশরাফ: চুয়াডাঙ্গায় কয়েকশ মোটরবাইক, কয়েকটি মাইক্রো ও প্রাইভেটকার পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সদর থানা, পুলিশ লাইন ও কোর্টপুলিশের হেফাজতে পড়ে থাকা যন্ত্রযানগুলোর করুণ দশা দেখে মাঝে মাঝেই অনেকে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, আইনের জালে জড়িয়ে মূল্যবান গাড়িগুলো যেন দাঁতকেলানো পুটিশুঁটকিতে রূপান্তর হয়েছে। অথচ দ্রুত নিলামে বিক্রি করলে পাওয়া যেতো যেমন বহু রাজস্ব, তেমনই কিছুটা হলেও সাশ্রয়ী হতো বৈদেশিকমুদ্রা। কেননা, ভিকেলগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা চত্বরে ৬০টি মোটরসাইকেল, ৫টি প্রাইভেটকার, দুটি মাইক্রোবাসসহ একটি মিনিট্রাক পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। উইপুকা না হলেও মাটি আর জঙে কুরে কুরে খাচ্ছে যেমন এসব যানবাহন, তেমনই পুলিশ লাইন প্রাঙ্গণে রাখা ৫৫টি মোটরসাইকেলেরও অভিন্ন দশা। ট্রেজারি প্রাঙ্গণে? শতাধিক মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি অবৈধযান পড়ে আছে। এগুলোর দশা দেখে কঙ্কাল বললেও ভুল হবে। মোটরসাইকেলের হাড়গোল বলাই ভালো। এসব মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের করুণ দশা কেন? অধিকাংশই চোরাই। বৈধ দাবিদার নেই। কয়েকটি মোটরসাইকেলের বিষয়ে সম্প্রতি মামলা রুজু করা হলেও অধিকাংশ বন্দি মূলত জিডিমূলে। অভিযোগ রয়েছে এসব মোটরসাইকেলসহ যানবাহনের যন্ত্রাংশ একটু একটু করে হারিয়ে যায়। দৃশ্য দেখে অনেকেরই সঙ্গত প্রশ্ন- পুলিশ লাইন কিংবা থানা চত্বরে কি চোর ঢোকে? তাছাড়া খোলা আকাশের নিচে রাখার কারণে কাপড় পচে খসে পড়ার মতো লোহাতেও যেন পচন ধরেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আটককৃত মোটরসাইকেলগুলোর অধিকাংশই চোরাই। উদ্ধারের পর প্রথম দিকে হয়তো কেউ কেউ মালিক বলে দাবি করেছেন, পরে বৈধ কাগজ দেখাতে না পেরে সটকে পড়েছেন। অধিকাংশ মোটরসাইকেলই রেজিস্ট্রেশনবিহীন, কিছু মোটরসা্ইকেলে নম্বরপ্লেট লাগানো থাকলেও তা ভুয়া। ফলে পড়ে আছে মাসের পর মাস। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মিনিট্রাক আটক হয়েছে অবৈধ দ্রব্যবহনের জন্য। মালিকানা দাবি করেননি বলেই হয়তো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

নষ্ট হওয়ার আগে নিলামের সুযোগ নেই? এ প্রশ্নের জবাবে ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হক বললেন, আমি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় যোগদানের পর মোটরসাইকেলগুলোর করুণ পরিস্থিতি দেখে আদালতে মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অভিযোগপত্র প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০টি মামলা আদালতে প্রেরণ করতে পেরেছি। আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে নিলামের আদেশ দিলেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিলাম করতে পারেন। তাছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে থাকা অর্ধশত মোটরসাইকেলরও অভিন্ন অবস্থা। তবে ট্রেজারির সামনে রাখা যানগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার আলামত। ওগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন মামলা সংশ্লিষ্ট আদালত।

আমাদের উপজেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা থানা চত্বরে পড়ে আছে ৩৩টি মোটরসাইকেল, জীবননগর থানায় ৫টি ও দামুড়হুদা মডেল থানা প্রাঙ্গণে ২০টি একইভাবে পড়ে থেকে যৌবন হারিয়ে পৌরত্ম পেরিয়ে এখন হাড্ডিসার কঙ্কাল। অবাক হলেও সত্য যে, এসব মোটরসাইকেলের অধিকাংশই দামি। কিছু রয়েছে চোরাই, কিছু রয়েছে ভারত থেকে অবৈধপথে পাচার করে আনা। যাকে স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয় টানা। অবশ্য কিছু মোটরসাইকেল রয়েছে, যেগুলো শোরুমের কিস্তি দিতে না পারার কারণে মালিক থেকেও নেই। অনেকে তাদের বাকিতে কেনা সাধের মোটরসাইকেলটি মাঝে মাঝে দেখতে থানা বা পুলিশ লাইনের দরজায় দাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। ওদের কষ্ট আর ক’জনইবা বোঝেন?

Leave a comment