অভিযুক্ত কুতুব উদ্দীনের শাস্তির দাবি তুলেছে অভিভাবক মহল
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির দু ছাত্র যমজ ভাই মনিরুল ও জাকিরুলকে লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। জখম দু ছাত্রকে অচেতন অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক কুতুব উদ্দীন ওই দু ছাত্রকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। অভিভাবকমহল অভিযুক্ত শিক্ষক কুতুব উদ্দীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের মজিবুর রহমানের দু ছেলে (যমজ দু ভাই) মনিরুল ও জাকিরুল গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। জাকিরুলের রোল নং ১ এবং মনিরুলের ৭। বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক কুতুব উদ্দীন গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৯ম শ্রেণিতে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মনিরুলকে মহানবীর (স.) পিতার নাম বলতে বলেন। মনিরুল উত্তর দেয় আব্দুল্লাহ। এরপর শিক্ষক বলেন, তার পিতার নাম কী। মনিরুল বলে আব্দুল মুত্তালিব। এরপর শিক্ষক আবার জিজ্ঞাসা করেন, আব্দুল মুত্তালিবের পিতার নাম কী? মনিরুল উত্তর দিতে না পারলে শিক্ষক কুতুব উদ্দীন তার চুল চেপে ধরে বেদম মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই ক্লাসে থাকা তার যমজ ভাই জাকিরুল বলে ওঠে শিক্ষককে অনুরোধ করেন ওইভাবে না মারার জন্য। এতে শিক্ষক কুতুব উদ্দীন ক্ষিপ্ত হয়ে জাকিরুলকেও বেদম মারপিট শুরু করেন। মারতে মারতে দু ছাত্রকে ক্লাসের বাইরে বের করে আনেন। এরপর চুল চেপে নিয়ে আসেন অফিস রুমে। সেখানেও পুনরায় দু ভাইকে পেটান তিনি। মারপিটের এক পর্যায়ে রক্তাক্ত জখম দু ছাত্র জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্কুলের অন্য ছাত্ররা এগিয়ে আসে তাদেরকে কলের পাড়ে নিয়ে মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। পরে তাদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চিৎলা হাসপাতালে) ভর্তি করা হয়। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা এ প্রতিবেদককে জানায়, বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে প্রধান শিক্ষকের সামনেই তাদেরকে পিটিয়ে অজ্ঞান করা হয়। কোনো শিক্ষকই তাদের ঠেকাননি। এমনকি তাদের হাসপাতালেও নিয়ে যাননি। আমরাই শেষমেশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের শাস্তিরও দাবি জানায়। আহত দু ছাত্রের মা বেলী খাতুন অভিযুক্ত শিক্ষকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমার দু ছেলেই ভালো ছাত্র। তাদের মাথা খুবই ভালো। অথচ তাদেরকে গরুর মতো করে পেটানো হয়েছে। তাদের সারাদেহ থেকে রক্ত ঝরছে। আমি ওই শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্লাস রুমে কী হয়েছিলো তা আমার জানা নেই। তবে অফিসে নিয়ে এসে আমাদের সামনে তাদেরকে পুনরায় মারধর করাটা ঠিক হয়নি। আমি মারতে নিষেধও করেছিলাম। কিন্তু উনি এতোটাই রেগেছিলেন যে উনি আমার কথাও শুনলেন না। অভিযুক্ত শিক্ষক কুতুব উদ্দীন মোবাইলফোনে জানান, আমি মহানবীর (স.) ৪ পুরুষের নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও যখন বললো আমার নিজের পৈদাদার নামই আমি জানিনে তাহলে মহানবীর পৈদাদার নাম বলবো কী করে? ওই কথা শোনার পর আমার কাছে মনে হয়েছে সে আমার সাথে ব্যঙ্গ করছে। ওই সময় আমি আর নিজেকে চেক দিতে পারিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক কুতুব উদ্দীন সম্পর্কে এলাকাবাসী মন্তব্য করে বলেছে, তার বর্তমানে মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা জানায়, ওই শিক্ষক বাল্যবিয়ে পড়ানোর অপরাধে জেল খেটেছেন। বেশ কয়েকবার জরিমানাও দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আর বাল্যবিয়ে পড়াতে পারছেন না এবং মোটা অঙ্কের টাকাও কামাতে পারছেন না। তাই ওনার মাথা খারাপ হয়ে থাকতে পারে। এদিকে ওই শিক্ষকের প্রতি তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি তুলেছে এলাকার অভিভাবকমহল।
প্রিয় পাঠক, মহনবীর (স.) দাদার পিতার নাম কী ছিলো এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়। এরপর জানতে চাওয়া হয় দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট। পরে দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার জয়নাল আবেদীন, পরিশেষে জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ইমাম হাজি মাও. শফিকুল ইসলামের কাছে।