ভারতে গিয়ে বিপাকে বাংলাদেশিরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারত সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সে দেশে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি। এই লোকজনের অধিকাংশ কোলকাতায়। তাদের অনেকেই আবার চিকিৎসার জন্য সেখানে গেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজের নাগরিকদের জন্য ওই দেশে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করতে ভারতকে অনুরোধ করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নির্দেশে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল হয়ে যায়। কোলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এটিএমে টাকা মিলছে না। ব্যাংকগুলোতে পড়ে যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল ঘোষণার পর থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন ও কোলকাতায় উপ-হাইকমিশন চিকিৎসা ও বেড়াতে গিয়ে লোকজনের বিড়ম্বনার তথ্য জেনেছে। তবে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভারতীয়রাই ব্যাপক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তেমনি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তবে যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তাদের বিড়ম্বনাটা কম।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কোলকাতার সম্রাট হোটেলের ব্যবস্থাপক সুকান্তবাবু বলেন, নোট বাতিলের পর কোলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটক আসা কমে গেছে। মিলছে না ১০০ রুপির নোট। ফলে ডলার ভাঙাতে বাংলাদেশিরা বিপত্তিতে পড়ছেন। বাজারে ১০০ রুপির নোটের অভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে মূলত বাংলাদেশিরা থাকেন। এখানের আবাসিক হোটলে আটকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি। ভারতীয় রুপি না পাওয়ায় অনেকের খাবার কিনতে সমস্যা হচ্ছে। এর সুযোগ নিয়ে অনেক হোটেল বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের জন্য পুরোনো নোট নিলেও পুরো ৫০০ বা ১০০০ রুপির খাবার খেতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ওই ব্যবস্থাপক আরও বলেন, অনেক বাংলাদেশি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে বিপদে পড়েছেন। কারণ হাসপাতালে পুরোনো টাকা নিতে চাইছে না। এ কারণে কেউ কেউ সফর সংক্ষিপ্ত করে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৩০০ জনের মতো রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট হঠাৎই বাতিল হওয়ায় এরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের কমকর্তা বলেন, সরকারি হাসপাতালে পুরোনো নোট নেয়ার আদেশ থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো পুরোনো নোট নিচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা। কোলকাতায় অবস্থানরত এক বাংলাদেশি পর্যটক বলেন, অনেক ব্যাংকই বাংলাদেশের পর্যটকদের পাসপোর্ট দেখে বাংলাদেশের পর্যটকদের কিছু কিছু রুপি বদলিয়ে দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কোলকাতার মুদ্রা ব্যবসায়ী নওশাদ আলী বলেছেন, ১০০ রুপির নোটের অভাবে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কোলকাতার অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ নতুন নোট ও ১০০ রুপির নোটের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করতে পারছেন না। কোলকাতার কুরিয়ার ব্যবসায়ী সরফরাজ আলম গতকাল শনিবার বলেছেন, এই আর্থিক সংকটের কারণে তাদের ব্যবসা প্রচণ্ডভাবে মার খাচ্ছে।