বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমানের ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী আজ

 

মহেশপুর প্রতিনিধি: আজ ২৮ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী। এ উপলক্ষে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন স্থানীয় প্রশাসন ও তার পরিবারের লোকজন। তার নামে নির্মিত মহা বিদ্যালয়ে ও নিজ গ্রাম খর্দ্দখালিশপুরে দোয়া মাহাফিল অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৪৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে তার জন্ম হয়। তার পিতার নাম মরহুম আক্কাস আলী এবং মাতার নাম মরহুমা কায়ছুন নেছা। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার যশোরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দখালিশপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে হামিদুর রহমান ছিলেন সবার বড়। সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাবা আক্কাস আলীর সাথে তিনি ঘরামির যোগালের কাজে যেতেন।  ১৯৭১ সালে ২রা ফেব্রুয়ারি হামিদুর রহমান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সে সময় দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঢেউ শুরু হয়েছে। তাকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার চট্রগ্রামে। ২৫ মার্চ রাতে খান সেনারা বাঙ্গালিদের ওপর আক্রমন শুরু করলে চট্রগ্রামেই প্রথম সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রথম খান সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। হামিদুর রহমানও ওই যুদ্ধে অংশ নেয়। তাদের যুদ্ধকালীন এলাকা ছিলো সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল এলাকা। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দক্ষিণপূর্ব কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শত্রু পক্ষের দুজন সৈন্যকে ঘায়েল করেন। এরপর শত্রু  পক্ষের গুলিতে ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর সকালে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। এই যুদ্ধে মাইন বিষ্ফরণে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত ও নিহত হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে তার ইউনিট কমান্ডার ছিলেন লে. কায়ুম এবং সেক্টর কমান্ডার ছেলেন জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমান (পরবর্তীতে লে. জেনারেল এবং সেনাবাহিনীর প্রধান ও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট)। তখন তার সহযোদ্ধারা তার লাশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলা সদর আমবাসার ৮৬ কিলোমিটার দূরে হাতিমারাছড়া গ্রামে জানাজা করার পর একটি মুসলিম পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করেন। ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তার দেহবাশেষ ঢাকায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে আসা হয় এবং তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ এই জাতীয় বীরের দেহবাশেষ গ্রহণ করেন। এখানে সর্ব স্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর ১১ ডিসেম্বর মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আর এক বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ল্যাফট্যন্টনেন্ট মতিউর রহমানের সমাধিস্থলের পাশে পুরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনরায় সমাহিত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ বছর পার হলেও তার পরিবারের স্বজনদের অনেক আশা এখনও পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ভাই ফজলুর রহমান। সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল ৯টায় কলেজে মিলাদ মাহাফিল ও আলোচনাসভার আয়াজন করা হয়েছে। এছাড়া তারা যে বাড়িতে বসবাস করছেন সেটি ১৯৮১ সালে এরশাদ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ঘরগুলো অচিরেই মেরামত করা প্রয়োজন। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমানের নামে কলেজ প্রাঙ্গণে একটি মিউজিয়াম স্মৃতি পাঠাগার, গ্রামে একটি প্রাইমারী স্কুল ও মহেশপুর শহরে একটি রাস্তার নাম করণ ছাড়া উল্লেখ যোগ্য তেমন কিছু গড়ে ওঠেনি।