শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বেড়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত : ঘরে না থেকে বাড়ি ফিরতে হিড়িক
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি অফিস-আদালত ছুটির পর এবার গণপরিবহনও বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্ত্রমকোর্টসহ দেশের সব আদালতে সাধারাণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সোমবার করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ওই ঘোষণার পরপরই সাধারণ মানুষ ঘরে না থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, যা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়ক। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বাস ট্রেন লঞ্চ ও বিমান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো মঙ্গলবার আলাদাভাবে বন্ধের এ ঘোষণা দেয়। এর মধ্যদিয়ে সারা দেশে কার্যত যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেল। এতে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ বাংলাদেশের সব জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে।
এছাড়াও সারাদেশে ট্রেন, বিমান, সড়ক ও নৌযান চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ভিডিও বার্তায় গণপরিবহন বন্ধের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দেশের মানুষ, যাত্রীসাধারণ, গাড়ির মালিক শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনও যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
এদিকে দেশের সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এ ঘোষণা দেন। সন্ধ্যা থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী জানান, যেসব রেল বিভিন্ন বেজ স্টেশন থেকে ঢাকায় এসেছে, তারা আবার ফিরে যাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে তেল, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য পরিবহনের জন্য সীমিত আকারে ট্রেন চলবে।
এর আগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে রেলওয়ের সব লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার থেকে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো।
দেশের সব রুটে গতকাল মঙ্গলবার থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর খান। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, করোনার বিস্তার রোধে সারাদেশে আজ থেকে যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যবাহী নৌ চলাচল করবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিকাল থেকে দেশের নদীবন্দরে চলাচলকারী সব যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গাদাগাদি করে লঞ্চে করে যাত্রীরা গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে তারা নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে।
গতকাল সকাল থেকেই সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে বিভিন্ন রুটে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সেই ধারা গতকালও অব্যাহত ছিলো। যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে লঞ্চ মালিকদেরকে যে ১১ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা অনেকেই মেনে চলছিলেন না। এজন্য নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান দুই ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর থেকে মুন্সিগঞ্জে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে এবং মানিকগঞ্জ থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চের পর দেশের অভ্যন্তরীণ আকাশপথে উড়োজাহাজের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ সব বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ চলাচল থাকবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। আর্ন্তজাতিক চারটি আকাশপথে ফ্লাইট বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।