আইন লঙ্ঘন করেই গাংনীতে চলছে ক্লিনিকগুলো : অসহায় রোগীরা

মেহেরপুর প্রতিনিধি: সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনের মধ্যদিয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কয়েকটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে নেই কোন মেডিকেল অফিসার কিংবা দক্ষ নার্স। বাণিজ্যিক ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছেন রোগীদের সাথে প্রতারণার মধ্যদিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি অবগত হলেও অদৃশ্য কারণে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের নমনীয়তায় রোগী ও স্বজনদের পাশাপাশি চিকিৎসকদের মাঝেও ক্ষোভ বাড়ছে। বর্তমানে সময়ে বিএমডিসি সনদপ্রাপ্ত অনেক চিকিৎসক শুধুমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দান করছেন। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত আরো অনেকে খ-কালীন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে থাকেন। এসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হবে। অপরদিকে যারা নীতিমালা মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তারাও স্বস্তি পাবেন।
গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বাজার হিসেবে পরিচিত। এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়ত বামন্দী বাজারে যাওয়া আসা করে। এ সুযোগ লুফে নিতে অনেকটাই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বামন্দী বাজারে এক ডজনের ওপরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি রয়েছে জনমনে। এর মধ্যে মাহি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, করবী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আল ফালা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ক্লিনিকের কাগজপত্রে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেখানো হলেও কার্যত তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। ভাড়া করা মেডিকেল অফিসার নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত করিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শন পার করেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবগত হলেও রহস্যজনক কারণে নিরবতা পালন করেন। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি না থাকায় রোগীদের সাথে প্রতারণা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও সনদপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ছাড়াই আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন করে মেডিকেল অফিসার যিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দক্ষ নার্স ও অন্যান্য জনবল থাকতে হবে নিয়মানুযায়ী। ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা পালন হয়না এসব ক্লিনিকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খ-কালীন সময়ে কয়েকজন চিকিৎসক এখানকার ক্লিনিকে অপারেশন করে থাকেন। সিজারিয়ান অপারেশন, এপেনডিক্সসহ বিভিন্ন প্রকার অপারেশন করা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত না করেই। অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। ক্লিনিকের বয়, নার্স আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্লিনিক মালিক নিজেই চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন।
কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন জানান, এসব ক্লিনিকের রয়েছে পোষ্য দালাল। যারা গর্ভবর্তী মায়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা প্রলোভনে ক্লিনিকে ভর্তি করায়। অপারেশন হওয়ার পর নানা অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হলেও রোগী ও স্বজনদের আর কিছুই করার থাকে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে আমরা আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে নীতিমালা ও শর্ত পূরণ না করলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।