চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির চার ইউপি চেয়ারম্যান ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর দায়িত্বে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১০ ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন করার উপযোগী হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি ইউপি নির্বাচন উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করায় দীর্ঘ ৪/৫ বছরেরও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নির্বাচন ঝুলে রয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির চার ইউপি চেয়ারম্যান ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর দায়িত্বে রয়েছেন। নবগঠিত চার ইউনিয়ন পরিষদের ভোটাররা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে নির্বাচিত নতুন জনপ্রতিনিধি আসতে না পারায় এলাকার উন্নয়ন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে, দামুড়হুদার নতিপোতা ও নাটুদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমনটি জানিয়েছে জেলা নির্বাচন কমিশন। যে সকল ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ৫ বছরের স্থলে ১০ বছরে পেরিয়ে গেছে ওই ইউপিগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের দাবি করেছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
যে সকল ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর থেকে ১০ বছর হয়ে গেছে এমন ৫ ইউনিয়ন পরিষদ হলো সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ৫ জুন। এ পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ৫ জুন। কিšুÍ, রিট নং ৮৯৮৭/২০১৭ এবং ৯৫৯৮/২০১৭ দুটি মামলা থাকায় আর নির্বাচন হয়নি। তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি নেতা আকতার হোসেন। এ ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন হলেও দীর্ঘদিনেও তারা ভোট দেয়ার সুযোগ লাভ করেনি।
একইভাবে সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ২০১৬ সালের ৫ জুন শেষ হয়েছে। এ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি নেতা আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার। এ ইউনিয়ন পরিষদের রিট নং-৮৯৮৯/২০১৫ এবং ৯৫৯৭/১৭ দুটি মামলা রয়েছে। এ ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠন হলেও এলাকার মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ লাভ করেনি।
সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদ তিতুদহ ও বেগমপুর ইউপির সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তার মেয়াদও ২০১৬ সালের ৫ জুন শেষ হয়েছে। এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ৫ বছরের স্থলে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করছেন। এ ইউনিয়ন পরিষদে রিট নং-৮৯৮৯/২০১৫ এবং ৯৫৯৭/২০১৭ দুটি মামলা রয়েছে। এ ইউনিয়ন ভেয়ে নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ গঠন হলেও এলাকার মানুষ তারাও ভোট দানের সুযোগ লাভ করেনি।
দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন পরিষদে ২০১১ সালের ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই। এই ইউনিয়ন পরিষদে জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং তিনি পরবর্তিতে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে হাউলী ইউপিতে উপনির্বাচনে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু নির্বাচিত হন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ১ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে কোনো চেয়ারম্যান না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আর হয়নি। এ ইউনিয়নে রিট নং ৮৬৮৮/২০১৭ মামলা রয়েছে।
দামুড়হুদার পারকৃঞ্চপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২১ জুন এবং মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট। এ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা এসএএম জাকারিয়া আলম। এ ইউনিয়ন পরিষদে রিট পিটিশিন নং ৫৭৭৭/২০১৬ এবং ৭৭৬৭/২০১৮ দুটি মামলা রয়েছে।
সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে শঙ্করচন্দ্র, মাখালডাঙ্গা, বেগমপুর ও নেহালপুর ইউনিয়নের ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব না হওয়ায় এবং তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস হলেও মামলাজনিত কারণে নির্বাচন হয়নি।
দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়ন বিভাজন হয়ে নতিপোতা ও নাটুদহ ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়েছে এবং উভয় ইউনিয়নে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও ওয়ার্ড বিভাজন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে পারকৃঞ্চপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পুনঃগঠিত ওয়ার্ডের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হয়। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্দেশনা মোতাবেক ওই ইউনিয়নের ভোটার তালিকা পূর্বের বিভাজন অনুযায়ী ফেরত আনা হয়। এ কারণে পরবর্তিতে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ মে তফসিল ঘোষণা করা হলেও রিট পিটিশনের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়। পরবর্তিতে ওই রিট সংক্রান্ত কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ৭ মে হাউলী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে জয়রামপুর ইউনিয়ন ও রঘুনাথপুর ইউনিয়ন নামে দুটি ইউনিয়ন গঠন করেছেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের গেজেট না পাওয়ায় ভোটার তালিকা বিভাজন করা হয়নি।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের দাবি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চারজন চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। তারা বা তাদের মনোনীত ব্যক্তিরা মামলা দায়ের করে বিভিন্ন অপকৌশলে প্রয়োগ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। এ ধরণের হীন চিন্তা থেকে তাদের বের হয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি প্রশাসন এ ধরনের অপকৌশল থেকে বাঁচতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন অথবা যারা মামলা করেছেন তাদের কাছ থেকে সমস্যাগুলো নিবিড়ভাবে শুনে প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে পারেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহম্মেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। কিন্তু উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় এ বিষয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।