আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। নিজের হাতে নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি তো নেই-ই, যা আছে তা হলো পরাজয়ের আগেই পরাজয় মেনে নেয়ার মতো হীনমন্যতা। এ হিসেবে আত্মহত্যা কাপুরুষোচিত কাজ। যে সমাজে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, সেই সমাজও দায় এড়াতে পারে না। ফলে সামাজিকভাবেও আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। আমাদের সমাজ যে আত্মহত্যা প্রবণতায় আক্রান্ত, তা অস্বীকার করার জো নেই। নানা কারণে এ প্রবণতা বেড়েছে। বাড়ছে। কারণগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিস্থিতি যে ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছুবে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।
গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার যে তথ্য উঠে এসেছে তা বেদনাদায়ক। আত্মাহুতি দেয়া যুবতী যেমন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন, তেমনই তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার যে অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযোগে অভিযুক্তও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। দুজনের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কও গড়ে উঠেছিলো। উভয়পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কনেপক্ষ আত্মীয় স্বজনকে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানোও শুরু করেছিলেন। এরই মাঝে কনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে কনেকে হবু বর আত্মহত্যায় প্ররোচনা করেছে বলেই সেলফোনটি ভেঙে আত্মঘাতী হয়েছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে যে বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে তা হলো ভাবিবরের উদ্দেশ্য প্রণোদিত আচরণ। বিয়ে এড়ানোর অপচেষ্টার কারণেই মানসকিভাবে ভেঙে পড়েন কনে। অসুস্থতা নিয়েও মনোকষ্ট ছিলো তার।
যে ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে, দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে, সেই ছেলে-মেয়েদের কি ছলচাতুরিতে মত্ত হওয়া উচিত? প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ মানেই দায়িত্বহীনতা। যে ছেলে বিয়ের পূর্বে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে সেই ছেলেকে ছুড়ে ফেলে নিজের পারদর্শিতা মেলে ধরার পথে হাঁটাই কি কনের উচিত ছিলো না? ছিলো, কিন্তু সেদিকে না গিয়ে নিজের এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর কাজটিই করেছে ওই ছাত্রী। এ কাজে প্ররোচনা থাকলে অবশ্যই প্ররোচনাকারীদের আইনানুগ শাস্তি হওয়া দরকার। সমাজের স্বার্থেই আইনের যথযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। একই সাথে আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।