আলমডাঙ্গা ব্যুরো: এলজিইডির মাইক্রোবাস থেকে ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ১ নারীসহ এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের ২ ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে। আলমডাঙ্গার ওসমানপুর বাজার এলাকা থেকে থানা পুলিশের একটি টহল টিম তাদেরকে আটক করে।
জানা গেছে, গতকাল ভোরে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর এলাকা থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবলিত স্টিকার সাঁটা একটি হায়েস নামের মাইক্রোবাস আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে প্রবেশ করে। মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ – ৫৬ – ৪২৭৯) ওসমানপুর বাজারের নিকট পৌঁছুলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের টহল টিমের গাড়ির সামনে পড়ে। পুলিশের গাড়ি দেখেই মাইক্রোবাস থেকে এক ব্যক্তি নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে গাড়িটি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে পলিথিনে মোড়ানো দুটি প্যাকেট থেকে ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় নারীসহ ২ পুরুষকে। আটককৃতরা হলেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের আব্দুল জলিলের ছেলে ইউসুফ আলী (৩২), ফরিদপুর জেলার সমজপুরের মৃত সোহরাব লস্করের ছেলে রিপন আলী (৩০) ও কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী আব্বাস আলীর স্ত্রী হামেদা খাতুন (৩৫)। গ্রেফতারের পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।পুলিশসূত্রে জানা গেছে, ইউসুফ আলী ও রিপন আলী এলজিইডির ড্রাইভার। আটক রিপন এলজিএসপি প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভার। ইউসুফ আলী এলজিইডির আউটসোর্সিং এর ড্রাইভার। হামিদা খাতুন নিজের পরিচয় গোপন করে পুলিশের নিকট মিথ্যা পরিচয় দেন। জানান, তিনি মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেহেরনগর গ্রামের মেয়ে। তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। কিন্তু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর উপজেলার শ্রীরামপুরের চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী আব্বাস আলীর স্ত্রী তিনি। আব্বাস আলী প্রায় ৭ সপ্তাহ আগে মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। বর্তমানে জেলহাজতে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে হামেদা খাতুন আরও জানান, পুলিশের গাড়ি দেখে ভয়ে মাইক্রোবাস থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তির নাম ফরমান আলী। মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গায় বাড়ি বলে মিথ্যা তথ্য দেয় হামেদা খাতুন। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরমান আলী মিরপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে। তিনি এলাকার চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। কোরবান আলী নামে তার এক সহোদরও মাদকব্যবসায়ী। তাছাড়া ফরমান আলী আটক হামেদা খাতুনের স্বামী মাদকব্যবসায়ী আব্বাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আব্বাস আলীকে আটকের সময় ফরমান আলী কৌশলে পালিয়ে যায়। আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী শামীমুর রহমান জানান, আটক মাদকব্যবসায়ীরা বেশ চতুর। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে মুখ খুলতে চায়নি। তবে ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত এলজিইডি অফিসের দুটি মাইক্রোবাস ও তার ড্রাইভারদের খোঁজ না পেয়ে দেশের সব অফিসগুলোতে খোঁজ রাখতে বলা হয়। আলমডাঙ্গা থানায় এলজিইডির মাইক্রোবাসসহ ড্রাইভারদের আটকের সংবাদ শুনে গতকাল চুয়াডাঙ্গা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে যান। তিনি জানান, এলজিইডির প্রজেক্ট ডিরেক্টর আমিনুল ইসলামের পিতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এলজিইডির আগারগাঁও অফিস থেকে দুটি মাইক্রোযোগে কয়েকজন কর্মকর্তা নীলফামারীতে যান। তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে ড্রাইভার রিপন ও ইউসুফ লাপাত্তা হন। গাজী শামীমুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জ পৌঁছে তারা খরচ কমাতে ফুড ভিলেজ নামক হোটেলে একটি মাইক্রোবাস রেখে দুজন আরেকটি মাইক্রোবাস নিয়ে কুষ্টিয়া আসেন। পরে চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ফরমান আলী ও আব্বাস আলীর স্ত্রী হামেদা খাতুনের নিকট থেকে ৪ কেজি গাঁজা কিনে ফিরে যাচ্ছিলো। সম্ভবত, ফরমান ও হামেদাকে ঢাকায় পৌঁছে টাকা পরিশোধের চুক্তি ছিলো। এছাড়া পুলিশ তাদের নিকট থেকে একটি নোটবুক উদ্ধার করেছে। তাতে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের নানা হিসেব সংকেতে লেখা রয়েছে। গতকালই সংশ্লিষ্ট আইনের ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আজ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতের নিকট ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে।