দামুড়হুদার জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ
দামুড়হুদা ব্যুরো: দামুড়হুদার ডুগডুগি বাজার থেকে দুই রোহিঙ্গা যুবতিসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আটককৃতদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবদের এক পর্যায়ে আটককৃত দু যুবককে ছেড়ে দেয় এবং দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, আটককৃত দুই রোহিঙ্গা যুবতির মধ্যে জুবাইরা খাতুন (২০) কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার পিতার নাম আমির হোসেন মাঝি। অপর রোহিঙ্গা যুবতি আনোয়ারা খাতুন (১৮) বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার পিতার নাম ইসমাইল হোসেন। এছাড়া আটককৃত অপর দুই যুবকের মধ্যে জাকির হোসেন (৪২) বরিশাল জেলার বাগদা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে এবং নাফিস সাদিক (২৫) ঢাকা নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার ফজলুল হকের ছেলে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কেএম জাহাঙ্গীর কবীর জানান, এলাকাবাসী দুই রোহিঙ্গা যুবতিসহ ৪জনকে আটক করে আমাদের খবর দেয়। আমরা তাদেরকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পাচারকারীচক্র দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে ভারতে পাচারের উদ্দেশে এনেছিলো বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পাচার কাজে জড়িত সন্দেহে আটককৃত দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলো বলে পুলিশকে জানায়। এর সত্যতা যাচাই করার জন্য তাদের নিজ নিজ এলাকায় খোঁজ-খবর নেয়া হয় এবং তাদের পিসিপিআর চেক করা হয়। তারা সত্য বলছে বলে প্রতিয়মান হওয়ায় তাদেরকে বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয়।
আটককৃত দুই যুবকের মধ্যে জাকির হোসেন বলেছেন, চিকিৎসার জন্য ভাগ্নে নাফিস সাদিককে সাথে নিয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে পূর্বাশা পরিবহনে চুয়াডাঙ্গা পৌছায়। বাসের মধ্যে মনির নামের এক যুবকের সাথে পরিচয় হয়। ওই মনির রোহিঙ্গা দুই যুবতির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা ঢাকা থেকে এক সাথে চুয়াডাঙ্গায় আসি। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বাসটার্মিনালে নেমে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হওয়ার পর অটোযোগে দর্শনার উদ্দেশে রওনা হই। অটোচালক ডুগডুগি বাজারে এসে আমাদের নামিয়ে দেয়। আমরা দুজন ওখানে একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। কিছুক্ষণ পর একটি পাখিভ্যানে ওই দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে দেখে আমরা তাদের দাঁড় করায়। এসময় এলাকাবাসী আমাদের আটকে পুলিশে খবর দেয়। আমরা কিছুই জানি না। তবে মনির সব জানে। মনিরকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এ দিকে এলাকাসূত্রে জানা গেছে, জাকির ও নাফিস সাদিক ওই দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে সাথে নিয়ে ইজিবাইকে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টে যায়। জয়নগরে পৌছে জাকির ও নাফিস সাদিক ধুড় পাচারকারী দালালের মাধ্যমে ভারতে পাচারের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে একই পাখিভ্যানযোগে ফিরে আসে তারা। ডুগডুগি বাজারে এসে জাকির ও নাফিস সাদিক পাখিভ্যান ছেড়ে দেয়। এলাকাবাসী আরও বলেছে, ওই পাখিভ্যান চালক জানতো দুই যুবকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা আছে। জনৈক ওই পাখিভ্যান চালক ওই টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ভাড়া বেশি চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভ্যানচালক জাকির নামের ওই যুবককে কিলঘুষি মারতে শুরু করে। কিলঘুষি মারলেও জাকির টাকার ব্যাগ ছাড়েনি। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে ভ্যানচালক পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা তাদের নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে তারা বাংলা বলতেও পারছে না, বুঝতেও পারছে না। তারা রোহিঙ্গাদের মতো কথা বলতে শুরু করে। তাদের কথা বার্তায় ওই দুই যুবতি রোহিঙ্গা বুঝতে পেরে তাদেরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।