চুয়াডাঙ্গায় জেলা পুলিশ আয়োজিত জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে জেলা ও দায়রা জজ রবিউল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা পুলিশ। জেলার সমস্ত জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ২০১৯ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ৫৭৪ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয়া হয় গতকাল শুক্রবার। সকাল ১০টায় জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে তাদেরকে সংবর্ধনা দেয় জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় অভিভাবক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জেলা পুলিশকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু ও জেলা শিক্ষা অফিসার নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যববস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোহা. রবিউল ইসলাম শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘গোটা পৃথিবীকে শান্তির বলয়ে আটকাতে হলে আইন জানতে হবে, আইন পড়তে হবে। মনে রাখতে হবে আইন সব সময় মানুষকে সুরক্ষা দেয়। এদেশ তোমার, এদেশ আমার। এদেশকে ভালোভাবে গড়তে হলে আমাদেরকে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গাকে দেশের সর্ব শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য মনে মনে প্রতিজ্ঞ হতে হবে। মাদককে না বলতে হবে। কৌতূহলবশেও মাদক ছুঁয়ে দেখা যাবে না। পুরোপুরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আধুনিক বিশ্বের সাথে আমাদেরকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। নইলে আমরা পিছিয়ে পড়বো।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সংবর্ধিত কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন ‘মনে রেখো ভালো কিছু করলে দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তোমরা পরীক্ষায় ভালো ফল করে দায়িত্ববান হয়ে উঠেছো। এখন দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে গেলেই সফলকাম কবে। তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলে এই অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, ভালো মানুষ হতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি মানবীয় গুণাবলি থাকলেই একজন মানুষ নান্দনিকভাবে বেড়ে ওঠে। চারপাশকে আলোকিত করো। মনের জগৎকে উদারভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি অন্যান্য বই পড়তে হবে। শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে বড় হলে হবে না, তোমার মাধ্যমে দেশ ও সমাজ আলোকিত হবে। তাই যে যতো বই পড়বে তার মনের জগৎও ততো বড় হবে। তোমরা বড়দের সম্মান করবে, ছোটদের স্নেহ করবে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতি পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের কাছে অনেক প্রত্যাশা বেড়েছে মানুষের। সমাজকে আরও এগিয়ে দেয়ার, চুয়াডাঙ্গাকে আরও ওপরে তুলে ধরার জন্যই কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার এ আয়োজন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার ইচ্ছে থেকেই এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। যাতে আমি চলে গেলেও চুয়াডাঙ্গার মানুষ এ ধরনের অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখে।’ অনুষ্ঠানে দেশের মঙ্গল কামনা করে এবং চুয়াডাঙ্গাকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে শপথ পাঠ করানো হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে শপথ পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চুয়াডাঙ্গা থানা মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ শিহাব উদ্দিন। এরপর গীতাপাঠ করেন এএসআই সুকুমার। কৃতী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাইয়ানা রাব্বী ও ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ইরতিজা কাসিদ খান। উপস্থিত প্রধান শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন উজ্জ্বল। অভিভাবকদের মধ্য থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম। ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাওসার আহমেদ বাবলু। জেলা পুলিশের এ ধরনের আয়োজনকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বক্তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এই প্রথম জেলা পুলিশ এত বড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো। যা জেলাবাসী সারাজীবন মনে রাখবে। এ ধনের আরও অনুষ্ঠান যাতে জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও ভবিষ্যতে আয়োজন করে সে ব্যাপারেও তাগিদ দেন অনুষ্ঠানের বক্তারা।