রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আজ
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। ভোট শেষে শনিবার রাতে ফল ঘোষণার মধ্যেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে হরতাল পালিত হবে। এ সময় ঢাকাবাসীকে তাদের অধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনের আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, উত্তর ও দক্ষিণের ফলাফলে সরকারি মদদ স্পষ্ট। আমাদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনেও সরকার আগের নির্বাচনের মতোই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাদের মতো করে দখল করেছে। এই সরকার সচেতনভাবে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনও সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। জবরদস্তি করে নির্বাচন করে এবং জনগণের রায়কে পদদলিত করে, দলীয়করণ করে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ভোট লুট করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান প্রমুখ।
এর আগে ভোট শেষে বিকেলে নয়াপল্টনে আরেক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের নামে আরেক তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন এতটুকু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অফিস থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। সকালে শুরু হয়েছে একটা বড় রকমের বিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। সেটি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সরাসরিভাবে নির্বাচনের হস্তক্ষেপের শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান, যা নির্বাচনী বিধির মধ্যে পড়ে না। আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার এই আহ্বানে দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল এবং বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
সিটি নির্বাচনে নানা অনিয়ম তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে। সমস্যা হয়েছে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রেও। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ১ শতাংশ ভোট দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও এর চেয়ে বেশি ভোট তারা দিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। যারা এই বাধা অতিক্রম করে কেন্দ্রে গিয়েছে তাদের সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি, মারধর করে বের করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে, এজেন্টদের তিনি প্রতিরোধে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এই কথা বলে তিনি সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের উসকে দিয়ে সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন।
প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে কয়েক শ করে ‘বহিরাগতকে’ জড়ো করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সমগ্র ঢাকা শহরে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী কর্মকা- সৃষ্টি করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভোটকেন্দ্রে যাননি। অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের প্রতীক ছিলো না এবং সে কারণে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিয়ে শনাক্তকরণের পর ভোট না দিতে দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের সঙ্গে ভোটকক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা শত শত অভিযোগ রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে দিলেও প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
দুই সিটির ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপির
