বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা

করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৩

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেছেন, ‘চীনে কী হচ্ছে সেটার জন্য এই ঘোষণা দেয়া হয়নি বরং অন্যান্য দেশে যা ঘটছে সেটাই এই ঘোষণার মূল কারণ।’ উদ্বেগ রয়েছে যে এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের বলেছে তারা যেনো চীনে ভ্রমণ করতে না যায়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর চার স্তরের সতর্কতা জারি করেছে- এর আগে আমেরিকানদের চীনে ভ্রমণের বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনা’ করার আহ্বান জানানো হয়েছিলো। সেখানে বলা হয়েছে যে চীনে যেসব মার্কিন নাগরিক আছে তারা যেনো সতর্ক থাকেন। চীনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১৩ জনের। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে, অন্যান্য ১৮টি দেশে আরও ৯৮ জন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এখনো কারও মৃত্যু হয়নি। চীনের বাইরের দেশের যতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ চীনের উহার শহরে ছিলেন, যেখান থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তবে জার্মানি, জাপান, ভিয়েতনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষে মানুষে-ভাইরাস সংক্রমণের আটটি ঘটনা ঘটেছে। জেনেভাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় ড. টেড্রোস ভাইরাসটিকে একটি ‘অভূতপূর্ব প্রাদুর্ভাব’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যাকে গিয়ে প্রতিক্রিয়াও ‘অভূতপূর্ব’। তিনি চীনা কর্তৃপক্ষের অসাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রশংসা করেন এবং বলেছেন যে চীনে বাণিজ্য বা ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ নেই। একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি, এই ঘোষণাটি চীনের প্রতি অবিশ্বাস বা অনাস্থার জন্য নয়, তিনি বলেন। তবে বিভিন্ন দেশ সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি বা ফ্লাইট বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে গুগল, আইকা, স্টারবাকস এবং টেসলার মতো সংস্থাগুলি। তারা তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে বা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এদিকে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের উহান নগরীতে আটকেপড়া ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে কোনো এক সময় ঢাকা ফেরার পর তাদের সবাইকে আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও থাকবেন। পর্যবেক্ষণের এই সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেনো ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সেজন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি বলছেন, চীন থেকে যারা ঢাকা আসছেন, তাদের খবর সময় সময়ে জানানো হবে। হজ ক্যাম্পে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। পদ্মা সেতুসহ দেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের প্রকৌশলী শ্রমিক ও কর্মকর্তারা কাজ করছেন, সেসব প্রকল্প এলাকায় সতর্ক অবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের। এর মধ্যে চীনে ছুটি কাটিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে ফেরা ৩৫ চীনা কর্মকর্তা ঘরে বন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেই আশঙ্কা থেকেই ঘরের ভেতর সময় কাটাচ্ছেন চীন থেকে ফেরা এসব কর্মকর্তা। কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করছেন না তারা। সেতু নির্মাণকারী কোম্পানির দেশীয় প্রধান লিও জিমিংও রয়েছেন এসব কর্মকর্তার মধ্যে।