নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলমডাঙ্গায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রাইভেট পড়ানো বাণিজ্য

শরিফুল ইসলাম রোকন: নীতিমালা লঙ্ঘন করেই আলমডাঙ্গায় প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতা বিপদজনক হয়ে উঠেছে। প্রাইভেট না পড়াই হয়রানি ও অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ক্রমশই আলমডাঙ্গা শহরে প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এ মফস্বলের লেখাপড়া প্রাইভেট নির্ভর হয়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা এলাকার সবচেয়ে বড় ও প্রভাব বিস্তারকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো আলমডাঙ্গা শহরে অবস্থিত আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। দুটিই এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময় আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা বালিকা বিদ্যালয়কেন্দ্রে এবং মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। সে কারণে ওই দুটি কেন্দ্র সংবলিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরষ্পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট প্রাইভেট পড়তে অত্যাধিক আগ্রহী। যাতে সংশ্লিষ্ট প্রাইভেট শিক্ষক ও তাদের কলিগদের নিকট থেকে পরীক্ষা হলে অবৈধভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায়। এ দুটি বিদ্যালয়ের চিহ্নিত কয়েকজন শিক্ষক শত শত শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। শিক্ষক হিসেবে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসম্ভব হলেও তাদের প্রাইভেট পড়ানোর মান নিয়ে অনেক অভিভাবকই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
আবার প্রাইভেট না পড়ায় হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। শিক্ষকের নিকট যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের বেশি করে নম্বর প্রদান, না পড়লে নম্বর কম দেয়া, খারাপ অচরণ ও নানা কারণে অপমান করার অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়তো না বলে তাকে নম্বর কম দিতেন। বাড়ি ফিরে মেয়ে মন খারাপ করে কান্নাকাটি করতো। তিনি বলেন, প্রাইভেট প্রবণ ওই শিক্ষকের প্রভাব বিদ্যালয়ে সর্বাধিক। ফলে মেয়েকে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হতো। এমন কী জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে সেখানেও ওই শিক্ষক মেয়েটির প্রতি অবিচার করতেন। অথচ ওই মেয়েটি জাতীয় পর্যায়ে সারাদেশে শ্রেষ্ঠ হয়ে বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
শুধু আলমডাঙ্গা শহরের দুই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে এমনটা নয়, পাইকপাড়া জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চিহ্নিত এক শিক্ষকসহ শহরের বাইরের অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও কম-বেশি এ ধরণের অনাকাক্সিক্ষত অভিযোগ রয়েছে।
অথচ, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে। এই বিধি না মানলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের শাস্তিরও বিধান রয়েছে। প্রাইভেট প্রবণ শিক্ষকরা এই বিধি তো মানছেই না বরং প্রাইভেট পড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে যৌন নির্যাতন করছেন। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন এমন ঘটনাও জানা গেছে।
আলমডাঙ্গার বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ওই গ্রামের এক ছেলের নিকট প্রাইভেট পড়তো। প্রাইভেট শিক্ষক ওই ছেলেটি আলমডাঙ্গার আপনজন নামের এক প্রাইভেট বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের নিকট প্রশ্ন ফাঁস করতেন।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রাইভেট টিউশনিতে জড়িত বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের এমপিও বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক ও চূড়ান্তের বরখাস্তের বিধান রয়েছে। আর সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ১৯৮৫ এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
ক্রমশঃ আলমডাঙ্গা অঞ্চলে লেখাপড়া প্রাইভেট কেন্দ্রীক করে নেয়ার অপচেষ্টা করা হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই প্রশাসনের। এতে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, কোচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার যে খেলা চলছে, তাতে তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে না। এমন মন্তব্য করেছেন একাধিকবারের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হারদী মীর শামসুদ্দীন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সাগর।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, প্রাইভেট বন্ধে বিদ্যমান যে নীতিমালা রয়েছে তার বাস্তবায়ন এ বছরেই করা হবে। এ জন্য সকল শিক্ষকের সহযোগিতাও প্রয়োজন হবে।