চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বর্জ্য ও নোংরা পানিতে দূষিত হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষিত করছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। পৌর এলাকার বর্জ্যসহ প্রতিদিন হাজার হাজার টন দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদীতে। ফলে মাথাভাঙ্গা নদীর স্বচ্ছ পানি হয়ে উঠছে দূষিত। গোসল করতে নামলেই ইদানিং শরীর চুলকাচ্ছে এবং পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ও ময়লা আবর্জনা ফেলার একমাত্র অবলম্বন মাথাভাঙ্গা নদী। একাধিকবার অনুরোধ করলেও পৌরসভা মাথাভাঙ্গার ধারে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করেনি। এছাড়া অনবরত নোংরা ও পচা পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে।
জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত। এর দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার। নদীটির উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গী উৎস থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে। মাথাভাঙ্গার ঐতিহ্য হলো সারা বছরই নিজস্বভাবে স্রোত বয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে এই নদী। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা প্রায় ৩০ বছর আগে ড্রেনব্যবস্থা চালু করে। সেই থেকে পৌরবাসীর ব্যবহার করা নোংরা পানি ড্রেন দিয়ে ফেলা হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদীতে। এছাড়া পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা হয় নদীর কূলে। যখন নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তখন ওই আবর্জনা নদীর পানিতে মিশে দূষিত হয় বলে অভিযোগ করেছেন চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী। তিনি বলেন ‘নদীটি ইদানিং নাব্য হারিয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পানির প্রবাহও আগের মতো নেই। তাও প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের হাজার হাজার টন নোংরা ও পচা পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে। ইদানিং নদীতে গোসল করলে গা চুলকায়। শহরের ড্রেনের ভেতর দিয়ে মরা মুরগি, উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল নদীতে গিয়ে পড়ছে। ময়লা আবর্জনা ও শহরের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ে। এ কারণেই পানি দিন দিন দূষিত হয়ে উঠছে। শুধু মাথাভাঙ্গা নদী নয়, পাশের নবগঙ্গা নদীও দূষণ হচ্ছে পৌরসভার ড্রেনের পানিতে। মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, নোংরা পানি শোধন করে যদি মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলা হতো তাহলে নদী দূষণ বন্ধ হয়ে যেত।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি শহরের একটু দূরে বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত জায়গার জন্য। আর পানি শোধন প্রকল্প অনেক ব্যয়বহুল ব্যাপার। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই নোংরা পচা পানি মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলা ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই আমাদের। তবে সরকার বেশকিছু মেয়রকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলো এ ধরনের পানি শোধন প্রকল্প দেখার জন্য। আমরা সম্প্রতি সেগুলো দেখে এসেছি। আমাদের বিশ্বাস সরকার হয়তো শিগগিরই এ ধরনের পানি শোধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তখন আর নদী দূষণ হবে না।’