চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সূচনা নাম ছিলো চুয়াডাঙ্গা টাউন কমিটি। এ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো মূলত শহরকে পরিষ্কার পরিছন্ন করার পাশাপাশি একটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে? অবস্থাদৃষ্টে এটা এখন স্পষ্ট যে, কমিটির নাম পরিবর্তন আর শহর সম্প্রসারণ ছাড়া উদ্দেশ্য এখনও সেই সূচনতার তাগিদ রয়েই গেছে। তা না হলে শহরের অধিকাংশ মহল্লার পথ কেনো সংকীর্ণ? কেনই বা কাঁচা বাজারসহ মাছ মাংসের দোকানগুলো বর্জ্যেভরা? তীব্র দুর্গন্ধে জানান দিচ্ছে পরিবেশ কতটা দূষিত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীও।
চুয়াডাঙ্গা যখন শহরে রূপ নিতে শুরু করে তার আগে থেকেই ছিলো সাপ্তাহিক হাট, ‘ট’ বাজার। সেই ‘ট’ বাজার ও হাটের আবর্জনা বর্জ্য অপসারণসহ রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার পরিছন্নতার পাশাপাশি যেখানে সেখানে বিপনি বিতান এবং অপরিকল্পিত আবাসন ঠেকানোর তাগিদ অনুভূত হয়। মূলত সেই তাগিদ থেকেই সচেতন কিছু ব্যক্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। ১৯৪৭ সালে গঠন করা টাউন কমিটি পৌরসভায় উন্নীত হয় ১৯৭২ এ। শ্রেণি বিন্যাসের মাপকাঠিতে প্রথমসারীর স্বীকৃতিও মিলেছে। পৌরসভার একটি পরিষদ রয়েছে। পৌরবাসীর দেয়া করের টাকায় গঠিত তহবিল রয়েছে। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিদেশি প্রকল্পভিত্তিক কম-বেশি বরাদ্দের অর্থও মেলে ফি বছর। বিধি বিধান তো রয়েছেই। পরিষদের শীর্ষ কর্তার আসনে রয়েছেন মেয়র। পরিষদের হাতে বিধি বিধান প্রয়োগের ক্ষমতা বিধিতেই বিদ্যমান। সামাজিক শৃঙ্খলা দেখভালসহ পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলাই শুধু কাজ নয়, পৌর নাগরিকদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই পৌরবাসীর ভোটে পৌর পরিষদ নির্বাচিত হয়। এরপরও শহরের অধিকাংশ মহল্লা যেমনটি শহরের হওয়ার কথা তেমনটি তথা পৌর বিধি মোতাবেক নয়। না আছে অগ্নিকা- ঘটলে প্রয়োজনীয় পানি জোগানোর ব্যবস্থা, না আছে অ্যাম্বুলেন্স চলার সুযোগ। এমনকিছু মহল্লা রয়েছে যেখানে পাশাপাশি দুজন মানুষেরও হাটার রাস্তা। এসব মহল্লা টাউন কমিটি গঠনের আগে গড়ে উঠিনি। অতোঘিঞ্জি হওয়ার মতো অতো মানুষও বোধকরি ওই সময় ছিলো না। যে কমিটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলাসহ শহরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য গঠিত সেই কমিটি পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের পরও তার বাস্তবায়ন নেই কেন? কখনো ভোট হারানোর ভয়, কখনো স্বজন পোষণসহ অন্য কোনো কারণে বিধি বিধান প্রয়োগে গড়িমশির বিষয়টি অস্বীকার করার যায় না। যা পরম্পরায় রেওয়াজে দাঁড়িয়েছে। সেই রেওয়াজেরই কি আওতাভুক্ত হচ্ছে পরিষ্কার পরিছন্নতা। তা না হলে এ কাজে ঘাটতি কেন? তদারকির অভাব নাকি পরিষ্কার করার মতো অর্থ পৌরভাড়ারে নেই?
পৌরবাসী অজুহাতের চেয়ে শহরটিকে বসবাসের উপযোগী হচ্ছে কিনা সেটাই দেখতে বেশি আগ্রহী। টাউন কমিটি গঠন ও পৌরসভায় উন্নীতের পর একেবারেই যে কিছু হয়নি তা নয়। হয়েছে। হচ্ছেও। তবে পদে পদে অপ্রতুলতা বিদ্যমান। গতকালই দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় তারই সামান্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, শহরের বড় বাজার নিচের বাজার, মাথাভাঙ্গা ব্রিজ এলাকার পরিবেশ তীব্র দুর্গন্ধে ভরে উঠেছে। পরিস্থিতি ক্রমশঃ মন্দের দিকেই যাচ্ছে। এ থেকে দ্রুত প্রতিকার চেয়ে পৌর পরিষদের সেবা নয়, কৃপা কামনা করেছে ভুক্তভোগী মহল।