পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর শহিদুলের অনুরোধে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে সচিবের প্রতি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: দেরিতে হলেও মিনি স্টেডিয়ামের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আলমডাঙ্গাবাসীর। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) মীর শহিদুল ইসলামের অনুরোধে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে সচিবের প্রতি সুপারিশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপির অনুরোধে গত ৬ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রী আলমডাঙ্গায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়টি তালিকাভূক্ত করতে সুপারিশ করেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠের এক পাশে থাকবে একটি একতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুটি ড্রেসিং রুম, একটি অফিস রুম এবং নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ৩টি করে ৬টি টয়লেট। ভবনের সামনে ৩৫টি আরসিসি বেঞ্চ থাকবে। বাকিটা খোলা মাঠ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেশের প্রতি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। সেগুলোর নামকরণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই মরহুম শেখ রাসেলের নামে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা মিনি স্টেডিয়ামগুলো শেখ রাসেলের নামে করার অনুমতি চেয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন করেছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিযাল ট্রাস্টের কাছে। ১৮ এপ্রিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে এ সংক্রান্ত অনুমতিপত্র দেয় ট্রাস্ট। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১৩১টি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু হয় ওই অর্থ বছরেই। গত জুন মাসের ভেতর ১৩১টিরই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৪৯০টি উপজেলায় স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণের কথা। একটি প্রকল্পের অধীনেই সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো সরকারের। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি অধিগ্রহণ না করে উপযুক্ত স্থানে খাসজমি খুঁজে স্টেডিয়াম নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাই প্রকল্পটি একাধিক ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য খাসজমি পাওয়া গেছে যে ৫০ জেলার ১৩১টি উপজেলায়। শুধুমাত্র সেই ১৩১টি উপজেলায় ১ম ধাপে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু করা হয়। ওই বছর মে মাসে প্রথম ধাপের স্টেডিয়ামগুলোর তালিকার অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপের পর চলছে দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প অনুমোদনের কাজ। ইতোমধ্যে ১৫০টিরও বেশি উপজেলায় জায়গা মিলেছে। দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। ২য় ধাপে আলমডাঙ্গায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়টি তালিকাভূক্ত হচ্ছে। আগামী রোববার এ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ সংক্রান্ত এক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো গত ৪ এপ্রিল। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। শহরের সকল ক্রীড়ামোদী, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি ওই মুক্ত আলোচনায় শামিল হন। মুক্ত সভায় আলমডাঙ্গার এ-টিম মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। একই সভায় এ-টিম মাঠের যে জমি অবৈধ দখলে রয়েছে তা পুনরুদ্ধারের জন্য জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যান্য উপজেলায় ইতোমধ্যেই শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ অনেক আগেই শেষ হলেও আলমডাঙ্গায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো। আলমডাঙ্গায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন আলো দেখালেন আলমডাঙ্গার কৃতিসন্তান মীর শহিদুল ইসলাম। মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের নতুন করে সম্ভাবনার কথা জানতে পেরে আলমডাঙ্গার ক্রীড়ামোদী মানুষ যারপরনাই আনন্দিত। সন্তোষ্টি প্রকাশ করছেন মীর শহিদুল ইসলামের প্রতি।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের খেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে আলমডাঙ্গায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রতিমন্ত্রী ও মীর শহিদুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ক্রীড়াপ্রেমী আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, গ্রাম এলাকায় স্কুল থাকলেও খেলার মাঠ নেই। যে কারণে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার এসব স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হলে যুব সমাজ মাদকের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার সাথে সাথে বের হয়ে আসবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। গ্রাম এলাকায় একসময় খেলার মাঠ থাকলেও নগর উন্নয়নের কারণে এখন তা হারাতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা মাঠের পরিবর্তে বেছে নিয়েছে কম্পিউটার ও ভিডিও গেমস। সেই সাথে পা বাড়াচ্ছে মরণ ফাঁদ মাদক সেবনে। এই উপজেলার ছেলে মেয়েদের মাঠ ও খেলাধুলামুখী করতে এ উপজেলা শহরে অন্তত এ ধরণের মিনি স্টেডিয়াম অত্যাবশ্যক।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমুন আহমেদ ডন বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা থেকে ভালো মানের খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে না, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আলমডাঙ্গায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হলে ভালো মানের খোলোয়াড় বের হয়ে আসবে। যারা দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে উজ্জ্বল করবে। বর্তমান প্রজন্ম ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। খেলার সুযোগ পেলে তারা এসব অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে।