দারিদ্র্যের কোষাঘাত থেকে মুক্ত হোক সমাজ

মানুষ কেন গরিব হয়? এ প্রশ্নের নানামুখি জবাব যার কাছে যেমনই হোক, দারিদ্র্য বিমোচনের দায় সমাজ তথা দেশ অস্বীকার করতে পারে না। সাংবিধানিকভাবেও এর বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণে সরকারের যে একেবারেই পদক্ষেপ নেই তা নয়। সময়ের ¯্রােতে তথা দিনবদলের ধারায় পূর্বাবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। হচ্ছে। তবে দারিদ্র বিমোচনে আশাতীত গতিতে কিছুটা হলেও ঘাটতি রয়েছে। তা না হলে ক্ষুদ্রঋণের বোঝা আর আহার জোগানোর তাগিদে অসংখ্য মানুষকে বৈরি বা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও কেনো কাজের জন্য অনিশ্চয়তার প্রহর গুণতে হয়?
দেশে যে হারে মানুষ বাড়ছে, সেই হারে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা যাচ্ছে না। তাছাড়া নিখরচায় সু-চিকিৎসারও নিশ্চয়তা নেই। একেতো কাজের অভাব, তার ওপর চিকিৎসার অনিশ্চয়তা। এরপর রয়েছে দাদন ব্যবসাসহ মজুদ্দারদের অস্বাভাবিক অর্থলিপ্সুতাসহ চাড়া সূদে ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদ। যদিও ক্ষুদ্রঋণ পাত্র ভেদে ক্ষেত্র বিশেষ স্বচ্ছ্বলতার দ্বারও খলেছে। যৌতুক বা পণপ্রথা অনেকটা কমলেও দরিদ্র্য পরিবারগুলো থেকে তা সমূলে দূর হয়নি। কন্যা দায়গ্রস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় যেমন অনেকেই ক্ষুদ্রঋণে জড়িয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে, তেমনই অসুস্থতা অনেক পরিবারকে পথে বসিয়ে ছাড়ছে। কৃষি প্রধান দেশে কৃষি উৎপাদিত ফসল নিয়ে মজুদ্দারদের অন্তহীন কুটকৌশল হতদরিদ্র কৃষকদের প্রায় প্রতি মরসুমেই লোকসানের দিকে ঠেলে দেয়, দিচ্ছে। এসব থেকে পরিত্রাণের আশা করাও যেনো অবান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দারিদ্র বিমোচনের গতি আশাতীত তো হচ্ছেই না, বরঞ্চ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরিদ্র্যকে আরও দারিদ্র্যের কোষাঘাতে জর্জারিত করছে। বাড়ছে নাভিশ্বাস। শুধুমাত্র বিদেশে শ্রম বিকোনর পথটিই যেনো খোলা। তাও আবার পদে পদে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা। যদিও প্রবাসে যেতে আগ্রহীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে সরকারের বিশেষ নজর বিদ্যমান। এ সুযোগ হতদরিদ্র্যদের সামনে থাকলেও তা অবস্থাদৃষ্টে অনেকের জন্যই অধরা। যাদের আহার জোগাতেই কাটে অনিশ্চয়তার দিন, তাদের হাতের কাছে কাজের জোগান দিতে না পারাটা কি দায়িত্বশীলদের ব্যার্থতা নয়? তাছাড়া যাদের ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা বিপন্ন করছে তাদের ঋণদাতা সংস্থাকেও কি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিৎ নয়?
গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সমাজের যে খ-চিত্র উঠে এসেছে তা নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণ এবং চাহিদা অনুপাতে কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা সমাজকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধের কিস্তির টাকা জোগাতে অনেকের শুধু দিশেহারাই হতে হচ্ছে না, পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে আত্মাহুতিও দিচ্ছেন কেউ কেউ। এটা মেনে নেয়া যায় না। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি দরিদ্র্য হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।