পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক এবং জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকার বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যেন পুলিশ বাহিনীর থেকে কাক্সিক্ষত সেবাটা পেতে পারে সেজন্য আমরা পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে জনগণের পুলিশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জনের মধ্যদিয়ে যে কোনো ধরনের অপরাধ দমন করা সহজ এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা কাজ করবেন- সেটাই আমি আশা করি। আমরা চাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী জনবান্ধব হবে।’ অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন এবং সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তার কন্যা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এসেছিলো। ‘দেশে তারা লুটপাটের রাজত্ব করেছিলো। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, অস্ত্রধারী, মানিলন্ডারিং নানা ধরনের কাজ তারা করে গিয়েছিলো। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো কাজ করেনি।’ ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে অগ্নি সন্ত্রাসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সেই আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা। আমাদের পুলিশ বাহিনীর ২৯ জন সদস্যকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’ জনগণকে পাশে নিয়ে পুলিশ সেই ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার মতো এই ধরনের জঘন্য কাজ আর দেশের জাতীয় সম্পদগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা। তাদের এই জ্বালাও পোড়াও, হরতাল-অবরোধ এবং অগ্নিসন্ত্রাস। দেশকে একটা অচল অবস্থার দিকে নেবার তাদের পরিকল্পনা ছিলো।’ জীবন বাজি রেখে সেই সময় দায়িত্ব পালন করায় বাংলাদেশের প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘পুলিশের অবদান আমাদের ইতিহাসে সব সময় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ। তাদের সমস্যার সমাধান করা আমাদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি।’ পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা অপরদিকে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করেছি। প্রতিটি কাজে আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে আমাদের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পুলিশ বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। তাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে অত্যন্ত দক্ষতা, সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখেছি। ‘আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা আর্থিক ব্যয় হিসেবে নেই না। আমরা মনে করি, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে এটা আমাদের এক ধরনের বিনিয়োগ। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক সাজে সজ্জিত করে এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এবং জনগণের সেবা যাতে নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিয়ে যাচ্ছি।’ কোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়া ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি মনে করি, আপনারা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে যেমন জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে অপরদিকে সড়কের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশবাহিনীর যথেষ্ট সুশৃঙ্খল ভূমিকা আছে।
বিপিএম মরহুম মো. আকতার হোসেন (মরণোত্তর) এর পক্ষে তার সহধর্মিনী এবং দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত এএসআই নান্নু মিয়া হুইল চেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মইনুর রহমান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র পুলিশ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।