দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ট্রাক্টরের স্টায়ারিং আনাড়ি চালকের হাতে : দুর্ঘটনায় চালকসহ আহত ২

বেগমপুর প্রতিনিধি: সরু রাস্তায় একটি ইঞ্জনের পেছনে ৪টি ট্রলি লাগিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক্টর চালানোর অভিযোগ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। বিষয়টিতে কর্ণপাত না করায় দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ট্রাক্টরের স্টায়ারিং আনাড়ি চালকরে হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে আবারও হরহামেশাই ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের মধ্যে ৪নং ট্রলির পেছনে ধাক্কা লেগে এক বৃদ্ধ গুরুত্বর আহত হয়েছেন। আহতকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আনাড়ি চালককে ধরে হালকা উত্তম-মধ্যমও দিয়েছে উৎসুক জনতা। আহত চালককেও চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। চারটি ট্রলি নিয়ে সরু রাস্তায় ২০ চাকার গাড়ি চালানো কতোটা যৌক্তিক সে ভেবে দেখার জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, দর্শনা কেরুজ চিনিকলের একটি ইঞ্জনিরে পেছনে ৪টি ট্রলি নিয়ে গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে চিনকল থেকে হিজলগাড়ির দিকে রওনা দেয় অলিখিত হেলপার আনাড়ি চালক। পথিমধ্যে ট্রাক্টরটি দর্শনা-হিজলগাড়ি সড়কের দোস্ত গ্রামের মধ্যে জামে মসজিদের নিকট পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা গ্রামের মৃত টেঙর আলীর ছেলে ইছাহাক আলী (৬০) ৪নং ট্রলির ধাক্কায় পাকা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে গিয়ে গুরুত্বর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় উৎসুক লোকজন চালক তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়া গ্রামের সাত্তার মোল্লার ছেলে ছমির উদ্দিনকে উত্তম-মধ্যম দেয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কেরুজ চিনিকল সূত্রে জানা যায়, ট্রাক্টটির প্রকৃত চালক ছিলেন একই গ্রামের আব্দুল আজিজ। যিনি ট্রাক্টরটি চালাচ্ছিলেন তিনি কেরুজ চিনিকলের নিয়োগপ্রপ্ত কোনো চালকই নন। এ ব্যাপারে ট্রাক্টর চালক আব্দুল আজিজ বলেন, ট্রাক্টটি কয়েকদিন ধরে নষ্ট হয়ে গ্যারেজে পড়েছিলো। আজই সেরে ছমিরকে দিয়ে খামারে পাঠাচ্ছিলাম। তবে পেছনে পেছনে আমি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলাম। আমার চালককে লোকজন খুব মারধর করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
উল্লেখ্য, জেলার একমাত্রভারী শিল্প প্রতিষ্ঠন দর্শনা কেরুজ চিনিকল। আর এ চিনিকলের একমাত্র কাঁচামাল কাঁচা আখ। চিনিকলে আখ সরবরাহ হয়ে থাকে চাষিদের এবং চিনিকলের নিজস্ব বাণিজ্যিক কামার ও ক্রয় কেন্দ্র থেকে। দুঃখজনক হলেও সত্য চিনিকল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ঝুঁকি জেনেও আখ আনার জন্য একটি ট্রাক্টরের পেছনে ৪টি ট্রলি জুড়ে দেন। ফলে ট্রাক্টরের ৪নং চাকা এবং ৪টি ট্রলির ১৬ চাকা মোট ২০ চাকার গাড়ি জেলার বিভিন্ন ১০-১২ ফুটের সরু রাস্তায় চলাচল করে। সরু এবং আঁক বাঁকা রাস্তায় ২০ চাকার গাড়ি চলাচলের ফলে ওই গাড়ির সামনে এবং পেছন দিক দেখার যেমন চালকের সুযোগ থাকে না, তেমনি চলাচল করা পথচারীরা জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে গাড়িটি অতিক্রম করে হয়। ফলে প্রতি মরসুমে কেরুজ চিনিকলের পরিবহণে ঘটে দুর্ঘটনা। আর দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ গুণতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি সরু রাস্তায় চালানো কতোটা যৌক্তিক এ প্রশ্ন অনেকের? চিনিকল কর্তৃপক্ষের যুক্তি ক্রয় কেন্দ্র বা বাণিজ্যিক খামারের আখ চিনিকলে আনার জন্য একটি ইঞ্জিনের সাথে ৪টি খালি ট্রলি যায়। আখ বোঝাইয়ের পর ২টি ট্রলি আনা হয়। আর ২টি ট্রলি খালি থাকে। পরে তা বোঝাই হলে পুনরায় তাতে ইঞ্জিন জুড়ে চিনিকলে আনা হয়। যা চিনিকলের স্বার্থে করা হয়। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, চিনিকল কর্তৃপক্ষ ২০ চাকার একটি গাড়ি সরু রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে থাকে। এদিকে আখ মাড়াই মরসুম শুরু হলে চিনিকলের ট্রাক্টরের কোথাও না কোথায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আর দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকিপূর্ণ এ বিষয়টি কি কেরুজ কর্তৃপক্ষ একটু ভেবে দেখবেন এ প্রশ্ন সচেতন মহলের?
এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। যেকোনো দুর্ঘটনায় বেদনাদায়ক। চিনিকলের ট্রাক্টরগুলো যেন একটু দেখেশুনে চলে সে ব্যাপারে চালকদেরকে সতর্ককতা বার্তা দেয়া হয়েছে। এর থেকে কিভাবে উত্তোরিত হওয়া যায় সে বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কারোর জীবনে বলে আসে না। তারপরও কোনোভাবেই দুর্ঘটনা ঘটলে চিনিকলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।