পেঁয়াজের বাজারে আবারও অস্থিরতা

সয়াবিন পামওয়েল ও চিনির দামও ঊর্ধ্বমুখি
স্টাফ রিপোর্টার: আবারও বাড়লো পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজে ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারদরের তালিকায় দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরেছে।
এদিকে হঠাৎ করে আবার পেঁয়াজের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ উদ্বিগ্ন। গতকাল অনেক ক্রেতাই বাজার করতে এসে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। কমেছে পেঁয়াজের আমদানিও। ফলে দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ মানভেদে ৬০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। যা একদিনের ব্যবধানে নতুন দেশি পেঁয়াজে ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় হতাশ ভোক্তারা। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের বলেন, কীভাবে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম এতো বাড়লো? এ সময় তিনি এখন ‘আগুনের মধ্যে’ বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান মাস শুরুর আগেই ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। টিসিবি, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ প এবং এস. আলম গ্রুপ প ৫০ হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানি করবে। তাই পেঁয়াজের কোনো সমস্যা থাকবে না।
শুধু পেঁয়াজ নয়, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে সয়াবিন, পাম অয়েল ও চিনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ৫ টাকা বেড়ে ৯১ থেকে ৯৩ টাকা, খোলা পাম অয়েলে ৬ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ টাকা ও সুপার পাম অয়েলে ৬ টাকা বেড়ে ৮২ থেকে ৮৪ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১৫ টাকা বেড়ে ৪৭০ থেকে ৫১৫ টাকা ও ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিনির কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার বাজারে পেঁয়াজের দর উঠানামা করছে। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে বেড়ে যায় একশো টাকা। গতকাল শনিবার কেজিতে ৫০ টাকা কমেছে। তবে ভরা মরসুমেও পেঁয়াজের দর নিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ছিলো ৬০-৮০ টাকা। শুক্রবার সকালে সেই দাম এক লাফে বেড়ে গিয়ে ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে অবশ্য দর কমতে শুরু করে। এখন পাইকারি ১১০-১২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিলো। এতে বাজারে পেঁয়াজ কম উঠেছে। সংকটের কারণে দাম বেড়ে যায়। অপরদিকে ভরা মরসুমেও স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দর পড়ছে না। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পেঁয়াজ বীজের অতিরিক্ত দরের কারণে অনেকেই পেঁয়াজ চাষ করতে পারেননি। তাছাড়া গত বছর ৫ টাকা কেজি দরে চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন। পেঁয়াজ দরের অনিশ্চয়তার কারণে এ বছর অনেকেই চাষ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এসব কারণে এলাকায় পেঁয়াজের চাষ কম।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, যারা পেঁয়াজের গুটি লাগিয়েছিলেন সেই ক্ষেতের পিঁয়াজ উঠছে। তবে এর পরিমাণ কম। অপরদিকে যারা পেঁয়াজের বীজ থেকে চারা তৈরি করে লাগিয়েছেন তাদের ক্ষেতের পেঁয়াজ উঠতে সময় লাগবে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম।
এদিকে পেঁয়াজের দর স্বাভাবিক রাখতে ৩৫ টাকা কেজি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। তবে দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে স্বাদ আলাদা তাই ওই পেঁয়াজের প্রতি সব ধরনের ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। তবে সব ধরনের ক্রেতাদের পছন্দ উপযোগী পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে টিসিবি বিক্রি করলে পেঁয়াজের বাজার শান্ত হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা।