গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার: সকালটা ছিলো বৃষ্টিভেজা। মাঝখানে একটুখানি রোদ্দুর। তারপর আবার আকাশটা মেঘলা। বৃষ্টি হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। গতকাল শুক্রবার সারাদেশে আবহাওয়া এমনই ছিলো। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, তাপমাত্রা কমে আসবে। তার মানে, আবার হিহি শীত। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টা। ছুটিরদিনে অনেকেই লেপমুড়ি দিয়ে আয়েশি ঘুমে বিভোর। এমন সময় ঝপাৎ করে নেমে এলো বৃষ্টি। ঠিক রিমঝিম নয়, আবার টানা ঝিরিঝিরিও নয়। তবে তা শীতের চাবুক বটে। বৃষ্টিভেজা মুখ নিয়েই উঁকি দিলো সকাল। আবহাওয়া অধিদফতর টাটকা খবর নিয়ে খাঁড়া, সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। ভোরে বৃষ্টির পরিমাণটা একটু বেশি।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে দ্বীপজেলা ভোলায়। চুয়াডাঙ্গায় ১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার। রাজধানী ঢাকায় এ সময় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি একদিন থাকবে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা তেমনই মনে করছেন। বৃষ্টির কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, পৌষ মাসে যে বৃষ্টি হয় না, তা কিন্তু মোটেই ঠিক নয়। এ সময় পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে জলীয় বাষ্প আসে। এর প্রভাবেই বৃষ্টি হয়। তবে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, সেটি অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিলো।
বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব কেটে গেলে জেঁকে বসতে পারে শীত এমন তথ্য দিয়ে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, আজ শনিবারও বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে আসবে। রাতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে আসবে। রোববার থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। এর প্রভাবে স্থান বা অঞ্চলভেদে তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় এর মাত্রা ছিলো ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। মানুষ ছাতা মাথায় দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায় শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬.২ মিলিমিটার। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ২টা থেকে চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। দিনের কোনো কোনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬.২ মিলিমিটার। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২-১ দিন বৃষ্টি থাকবে। যার ফলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করবে।
চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও সাধারণ মানুষদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। মানুষ কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আকাশ মেঘরা ছিলো। রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করবে। বৃষ্টি আরও ২-১ দিন থাকবে। বৃষ্টির পর শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে জেলার ওপর দিয়ে।
এদিকে, হঠাৎ রাতে বৃষ্টি নামায় ইটভাটার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইট ভাটার মালিকরা। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে জেলার প্রায় ৮৫টি ইট ভাটার শুকনো আধা শুকনো ইট গলে নষ্ট হয়ে তাদের এই ক্ষতি হয়। অনেক জ্বলন্ত ভাটার আগুন নিভে চলতি ভাটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ভাটা পুনরায় চালু করতে কমপক্ষে ৭দিন সময় লেগে যাবে বলে জানান মালিক-শ্রমিকরা। এবার বৃষ্টির কারণে মরসুমের কয়েক সপ্তাহ পরেই ইট কাটা শুরু করেছে বলে জানান ভাটা মালিকেরা, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই ভেবে ব্যাপক কাঁচা ইট তৈরি করেন ভাটা মালিকরা। রাতে হঠাৎ করে বৃষ্টি হবে এটা অনেকের মাথায়ই আসেনি। যার ফলে এই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এলাকার ভাটা মালিকরা জানান, ব্যাংক লোন নিয়ে যারা ইট প্রস্তুত করেছে তাদের এখন মাথায় হাত। এই ক্ষতি পুশিয়ে নেয়া অনেক ভাটা মালিকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনিতে ধারাবাহিক লোকসানের কারণে অনেক ইটভাটা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। তারপর বৃষ্টিপাতের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে এতে অনেক মালিকের পথে বসার উপক্রম হবে।
প্রতিটি ইটভাটায় মালিক ও শতাধিক শ্রমিক ইট তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রত্যেক মরসুমে এসব ভাটায় কয়েক দফায় ইট তৈরি করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট তৈরি হয়। এবার বৃষ্টির কারণে মরসুমের কিছু পর কাঁচা ইট তৈরি করে রোদে শুকিয়ে তা পুড়িয়ে পাকা করার প্রস্তুতি চললেও। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে পানিতে ভিজে সদ্য তৈরি কাঁচা ইট ভেঙে নষ্ট হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে জেলার ৮৫টি ইটভাটা মালিকের প্রায় ৫০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো মাঝারি বৃষ্টি। সাথে ঝিরঝিরে বাতাস। রাস্তাঘাটে জমছে পানি। নিরাপদে বসে ভেজা গা ঝপটে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকার পাখি। বৃষ্টিস্নান করছে গাছপালা। ছাতা মাথায় দিয়ে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের সংখ্যাও কম। পথের ধারে বাড়িঘরের বারান্দা ও চায়ের দোকানে অলস সময় কাটানো মানুষের ভিড়। যা আষাঢ় মাসের বৃষ্টিপাতের পরিবেশেরই মতোই। গতকাল শুক্রবার মেহেরপুর জেলার চিত্র ছিলো এমনই। পৌষের শেষে এই আষাঢ়ে বৃষ্টি জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
গাংনী বাজারের ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, ভোর থেকেই কর্মচারীরা দোকানে আসে। কাজের জন্য এখনো কেউ আসেনি। শীতকালের বৃষ্টিতে স্বস্তির চেয়ে অস্বস্থি বেশি।
এদিকে সবজি ও রবি ফসলে এই মুহূর্তে ভরপুর মেহেরপুর জেলার মাঠগুলো। বিশেষ করে গম, মসুর, সরিষা, ভুট্টা ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সারা দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকের দুশ্চিন্তার সীমা নেই।