আলমডাঙ্গায় কৃষকের ধান ক্রয়ের লটারি প্রক্রিয়ায় আবেদন সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গা জেলার সবচে বড় আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪৮ হাজার কৃষকের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ২৭৫ জন অর্থাৎ শতকরা ৩ ভাগ কৃষক সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রির সুযোগ পেলেন। গত মঙ্গলবার মোট ৮ হাজার ১৭ জন আবেদনকারীর মধ্যে লটারির মাধ্যমে ৩ হাজার ২৭৫ জন কৃষককে চূড়ান্ত করা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে ভাগ্যবান কৃষক নির্বাচনের এ প্রক্রিয়ার ভেতরও অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
আলমডাঙ্গা কৃষি অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে জেলার সবচে বড় আলমডাঙ্গা উপজেলা গঠিত। আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অধিদফতরের পরিসখ্যান অনুযায়ী উপজেলায় মোট কৃষকের সংখ্যা ৪৮ হাজার। আমন মৌসুমে মোট ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার মে.টন।
দেশের অনেক এলাকায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়াভিযান শুরু হয়েছে। আলমডাঙ্গায় এখনও শুরু হয়নি। খোলা বাজারে ধানের মূল্য খুব বেশি হতাশাব্যঞ্জক। উপজেলার ৪৮ হাজার কৃষক পরিবার তাকিয়ে আছে অপেক্ষাকৃত বেশি মূল্যে সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে। উপজেলায় উৎপাদিত ৬৪ হাজার মে.টন ধানের ভেতর সরকারিভাবে মাত্র ১ হাজার ৯৬৫ মে.টন ধান কয় করা হবে। সেই হিসেবে মোট উৎপাদনের শতকরা মাত্র ৩ ভাগ ক্রয় করা হবে।
এমতাবস্থায় গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির জন্য কৃষক মনোনয়ন করা হয়। মোট ৮ হাজার ১৭টি আবেদনের ভেতর লটারির মাধ্যমে ৩ হাজার ২৭৫ জন কৃষককে বাছাই করা হয়। এই সংখ্যা খুবই নগন্য। উপজেলার মোট কৃষকের ভেতর শতকরা প্রায় মাত্র ৭ ভাগ লটারি জয়ী ভাগ্যবান কৃষক শুধুমাত্র সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
লটারির মাধ্যমে ভাগ্যবান কৃষক নির্বাচনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় যথাক্রমে অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন ও কাজী নিতু, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিয়ারাজ হোসেন, উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মোফাখখারুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান কাউসার আহমেদ বাবলু, নূরুল ইসলাম, আবু সাঈদ পিন্টু।
এদিকে, লটারির মাধ্যমে ভাগ্যবান কৃষক নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ভেতর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। অভিযোগকারীদের দাবি ৪৮ হাজার কৃষকের মধ্য থেকে কেন মাত্র ৮ হাজার কৃষকের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক গ্রাম রয়েছে যে সকল গ্রাম থেকে একজন কৃষকেরও আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে অভিযোগ করেন, অনেক ইউনিয়নের আবেদনের লিস্ট দেখলে অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ওই ইউনিয়নে মোট ৬০ জন কৃষকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। আবেদন সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬১-৬২ জনের। অর্থাৎ কৃষক সিলেক্ট করেই লটারির জন্য লিস্ট পাঠানো হয়েছে। লটারি অনুষ্ঠানে মাত্র ৩/৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। বাকিদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন যে লটারি প্রক্রিয়ার কথা তাদের জানানো হয়নি।
জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রোকন বলেন, লটারির বিষয়টি তিনি জানেন না। এমনকি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের জন্য গ্রামে গ্রামে কৃষক বাছাইয়ের বিষয়টিও তাকে কেউ জানায়নি। তিনি বলেন, কিছু ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক সুপারভাইজার) মিলে নিজেদের ফরমায়েশ মতো নির্দিষ্ট কৃষকের নিকট থেকে আবেদন সংগ্রহ করেছে। বেশিরভাগ কৃষকই বিষয়টি জানেন না। খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু বলেন, সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচনের বিষয়টি তিনি কিছুই জানেন না। তাকে এ সম্পর্কে কেউ কিছু জানায়নি বলে দাবি করেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, লটারির মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে কৃষক নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের সাথে মিলেমিশে কৃষকদের নিকট থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, কিছু মেম্বার ও ব্লক সুপারভাইজার মিলে পূর্ব নির্ধারিত নির্দিষ্ট সংখ্যক কৃষকের নিকট থেকে নাকি ধান বিক্রির আবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। গতবারও এদের অধিকাংশ সরকারিভাবে ধান বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছে। এমন অভিযোগ আমার কাছে অনেকে করেছে। সকল কৃষকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুবিধা উপজেলার কৃষকদের নিকট সকলের সহযোগিতায় সঠিকভাবে তুলে দিতে পারি।