চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসের দায়সারা গোছের সাঁতার প্রশিক্ষণ

প্রশিক্ষণ স্থলে গিয়ে পাওয়া যায়নি প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে চলমান শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনেকটা সংগোপনে চলা এ কার্যক্রমের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে পাওয়া যায়নি এর প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণার্থীদের। নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সাঁতার প্রশিক্ষণের আয়োজন করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া পরিদফতরের অর্থায়নে তৃণমূল পর্যায়ে ক্রীড়া উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা ক্রীড়া অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রীড়া কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসের মাধ্যমেও এমন প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা রয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গার নিভৃত পল্লী মাখালডাঙ্গায় চলছে মাসব্যাপি সাঁতার প্রশিক্ষণ। কর্তৃপক্ষের মতে গত ৩০ অক্টোবর এ কার্যক্রম শুরু হলেও কয়েক দফা প্রশিক্ষণস্থলে গিয়ে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের দেখা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, মাঝে মাঝে মাখালডাঙ্গা-দ্বীননাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য যে পুকুর নির্বাচন করা হয়েছে তা একেবারে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এতে শিশুরা অসুস্থ হতে পারে।
অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহম্মেদ চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা না করেই তিনি নিজের ইচ্ছে মতো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এমনকি তার অফিসের অফিস সহকারী ওসমান খানকেও অন্তরালে রেখে সরকারি অর্থ তছরুপ করে নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন। গত ৩০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসার নিজেই এ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে। এ সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাউকেই সেখানে দেখা যায়নি। আবার আগামী ২৬ নভেম্বর অনেকটা সঙ্গোপণেই তিনি এ কার্যক্রমের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের নিকট জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহম্মেদ জানান, ৩২ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই কোন না কোন ক্রীড়ার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকে। সেসব প্রশিক্ষণ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয় কি-না? সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান নি।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, মাখালডাঙ্গা-দ্বীননাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থীকে সাঁতারের বিভিন্ন কৌশল শেখানো হচ্ছে। যে কয়দিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সে কয়দিন প্রশিক্ষণার্থীদের মাথা-পিচু নাস্তা বাবদ দেয়া হয়েছে ১০-১২ টাকা করে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষককে দেয়া হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ভেন্যু ভাড়া (পুকুর) দেয়া হবে ৫০০ টাকা। এছাড়া বাকি টাকা কিভাবে খরচ হবে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে চাননি ওই ক্রীড়া অফিসার।
এহসান নামে এ প্রশিক্ষণার্থীর অভিভাবক জানান, খুব বেশি হলেও ৫-৬ দিন মত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যে দিন প্রশিক্ষণ হয় সেদিন ১০-১৫ জন মত ছাত্র উপস্থিত থাকে। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, সাঁতারের কৌশল তাদেরই শেখানো হয় যারা সাঁতার জানে। কিন্তু যাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাদের কেউ-ই ভালোমত সাঁতার জানেন না। তাহলে নামকাওয়াস্তে সাঁতার প্রশিক্ষণের নামে সরকারি টাকা তছরূপ করা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা জাতীয় গোল্ডকাপ (বালক-বালিকা) অনূর্ধ্ব-১৭ (২০১৯) ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়দের জার্সি, প্যান্ট, হুজ, বল ও জুতো ক্রয় বাবদ অনেক টাকা ঘাপলা করেছেন জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহম্মেদ। তিনি যে দোকান থেকে মালামাল অর্ডার দিয়েছিলেন সে টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না করে মূল টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা কম দিয়েছিলেন। একই সাথে আরও ১০ হাজার টাকার বেশি ভাউচার করে দিতে বললে সেই ব্যবসায়ী তাকে কোনো বিল ভাউচার দেননি। পরে অন্য জায়গা থেকে বিল ভাউচার নিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই কর্মকর্তা। বিষয়টি দতন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিলে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহম্মেদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে।