কালীগঞ্জের হাট-বারোবাজার স্কুলের মহতি ঠিকানায় বিত্তশালীরা দিচ্ছেন অব্যবহৃত কাপড়

হতদরিদ্র শিক্ষার্থীরা এখান থেকে কাপড় নিয়ে হচ্ছে উপকৃত
শিপলু জামান: বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটাই আশা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হাট-বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেউ যেন জামা-কাপড়ের কষ্ট না পায়। আর এটা ভেবে বিদ্যালয়ের একটি রুমে শুরু করেছে মহতি ঠিকানা কার্যক্রম। সেখানে রাখা আছে কাঠের আলনা আর স্টিলের আলমারি। আলনায় রাখা আছে ছেলেদের জন্য পুরাতন জামা-প্যান্ট, আর আলমারিতে রাখা আছে মেয়েদের জন্য নানা ধরনের পোশাক। হতদরিদ্র শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের মতো এখান থেকে কাপড় নিচ্ছে, আর বিত্তশালীরা তার অব্যবহৃত কাপড়টি এখানে দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই এ কাপড় নেন এবং দেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বারোবাজার নামক স্থানে হাট-বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ স্কুলে ৭৮৩ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। শিক্ষক আছেন ২০ জন, যার মধ্যে দুজন খন্ডকালীন শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০১৮ সালে তারা চিন্তা করেন এলাকায় এখনও অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ রয়েছেন। যাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো কাপড় পায় না। অনেক অভিভাবক আছেন যারা একটা পোশাকের জন্য বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে লজ্জা পায়। আবার অনেকে আছেন ঠিকমতো খাতা-কলম-কাগজ কিনতে পারে না। এদের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানের একটি রুমে গড়ে তোলেন মহতি ঠিকানা। আর এ রুমে একটি আলনা আর একটি আলমারি দেয়া হয়েছে। দেখাশোনা করার জন্য একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে অপেক্ষাকৃত বিত্তশালী বাঁচ্চারা এবং তাদের অভিভাবকরা পুরাতন কিন্তু এখনও ব্যবহারযোগ্য জামা-কাপড় রেখে দেন। আর যারা অসহায় হতদরিদ্র তারা এখান থেকে পছন্দ করে জামা-কাপড় নিয়ে যান। ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাক এখানে রাখা হয়। শিক্ষকরাও তাদের পুরাতন কাপড় এখানে রেখে দেন। যা অসহায় অভিভাবকরা নিয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলে, তার একটাই পোশাক ছিলো। অনেক সময় ময়লা হয়ে যেতো, আবার অনেক সময় ভিজে থাকায় পরতে পারতো না। বিদ্যালয়ের মহতি ঠিকানা থেকে সে একটি পোশাক নিয়েছে। তার মত এরকম অনেকে পোশাক নিচ্ছে।
মহতি ঠিকানায় দায়িত্বে থাকা শিক্ষক শ্যামল কুমার জানান, মহতি ঠিকানায় এক বছর লেনদেন চলছে। প্রায়ই কাপড় লেনদেন হচ্ছে। প্রথম দিকে অনেকে লজ্জা পেলেও এখন অনেকেই এখান থেকে কাপড় নিয়ে ব্যবহার করছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, তারা এ মহতি ঠিকানার জন্য একটি পৃথক একাউন্ট করেছেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বারোবাজার শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব- ০২১১১২২০০০০৬৯০৪ নম্বর এ একাউন্টটি প্রধান শিক্ষক ও তার (সোহেল রানা) যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। শুধু পুরাতন কাপড় নয় এ একাউন্টে এলাকার দানশীল মানুষের অনুদান দিয়ে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় নতুন কাপড়ও।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর স্বপ্ন দেখেন কিভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায়। এরপর ওই বছরের শেষ দিকে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ ডিজিটাল হয়েছে। তারা বিদ্যারয়ের সকল পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সব ধরনের আয়-ব্যয় অনলাইনে হচ্ছে। তিনি জানান, ২০১৮ সালে এ মহতি ঠিকানার উদ্যোগ নিয়ে ২০১৯ সালের শুরুতেই ৭০ জন অসহায় শিক্ষার্থীকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের ছোট ছোট আয়, শিক্ষকদের আর এলাকার মানুষের দেয়া অনুদানে তারা এ পোশাক দেন। এছাড়া বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে খাতা, কলম ও কাগজ দেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রঞ্জু জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল হয়েছে। এখন মহতি ঠিকানা যেটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এতে হতদরিদ্ররা উপকৃত হচ্ছেন।