পূর্বসূরিদের মতো ভুল পথে পা বাড়াবেন না

চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সময়োচিত। বস্তুত দেশের বৃহত্তম একটি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট থেকে ‘ন্যায্য হিস্যা’ দাবি করেন, তখন তারা ওই পদে থাকার ন্যূনতম যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেন। তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে, উপাচার্য একজন শিক্ষক এবং তারা মূলত শিক্ষার্থী। এছাড়া এ দুজনের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা অতীতের সমস্ত ‘রেকর্ড’ যেন ম্লান করেছে। আরও হতাশার বিষয়, শোভন ও রাব্বানীকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন যোগ্য অনেক প্রার্থীর মধ্য থেকে। তারা স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ প্রধানের সেই আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। ছাত্রলীগের অভিযুক্ত দুই নেতার বিদায়ে নাগরিকরা কতটা উচ্ছ্বসিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ফুটে উঠেছে। নতুন নেতৃত্ব পূর্বসূরিদের ভুল পথে পা বাড়াবেন না। তারা সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেবেন এবং সাংগঠনিক আদর্শ সমুন্নত রাখবেন। শোভন-রাব্বানীর পরিণতি ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জন্যও একটি কড়া বার্তা। দুর্নীতি, অনিয়ম ও সংগঠনের আদর্শবিরোধী কাজ করলে, কারও রেহাই নেই। একই সঙ্গে কেবল ব্যক্তি শোভন ও রাব্বানীর বিদায়েই উদ্ভূত পরিস্থিতির সুরাহা হতে পারে না। এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ সম্প্রসারিত হোক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগও মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। কারা এই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে শনাক্ত করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থ এভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের পকেটে যেতে পারে না। আমরা এও জানি, সদ্য বিদায়ী দুই নেতা ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরে কমিটি গঠন ও অনুমোদন দিয়েছেন। সেসব কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের স্থান হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোদ কেন্দ্রীয় কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান হওয়া নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। আমরা দেখতে চাইবো, ছাত্রলীগের শুদ্ধির স্বার্থে এসব কমিটিও পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
বস্তুত দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি গড়ে তুলতে হলে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে দেখছি, দেশের ছাত্র রাজনীতি এখন কীভাবে আদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থনির্ভর হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, এমনকি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ দেশের ছাত্র সমাজ যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছিলো, তা এখন যেন কিংবদন্তি মনে হয়। আসলে ছাত্র রাজনীতি যখন অবৈধ উপার্জন ও ক্ষমতার মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হয়, তখন দুর্নীতি, সংঘাত, কোন্দল, মাদক, অনৈতিকতা ও আদর্শহীনতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই চিত্র পাল্টাতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনেরই দায় বেশি। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব এবং এর মাতৃ সংগঠন আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।