গাংনীতে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় আশঙ্কাজনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। গেল ৯ মাসে ৫০১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মারা যাচ্ছে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরু ও ছাগল। অ্যানথ্রাক্স-এ আক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করার ফলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের দেহে। জনসচেতনার অভাব ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সীমাবদ্ধতার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। কেন ছড়াচ্ছে তা গবেষণার জন্য আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রোগতত্ত্ব বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে সীমান্তবর্তী হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে গরু ও ছাগল মারা যায়। আক্রান্ত একটি ছাগল জবাই করা হয়। এ মাংস যারা নাড়াচাড়া করেছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষের হাতে ঘা দেখা যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি সামনে আসে। এমনইভাবে গাংনী মাঠপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে আক্রান্ত গরু-ছাগল জবাই করার পর সেখানে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়েছেন লোকজন।
গত ৯ মাসে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৫০১ জন অ্যানথ্রাক্স রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। কোন কৃষকের পালিত গরু ছাগল হঠাৎ অসুস্থ হলে জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে কসাইখানাগুলোতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সুস্থতার সনদ ছাড়াই যত্রতত্র পশু জবাই হচ্ছে। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্রাক্স।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু নাতেক বলেন, আমার বাড়িতে কয়েকটি গরু ছাগল মারা গেছে। এর পরে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে অনেক বুঝিয়ে তাদেরকে নিয়ে এসে টিকা দেয়। এ গ্রামে টিকা সম্পন্ন হলেও আশেপাশের গ্রামগুলোতে টিকা প্রদান করা হয়নি।
গরু পালনকারী গাংনী বাজারপাড়ার মনিরুল ইসলাম বলেন, এর আগে তো এসব টের পাইনি। গরু কখন কী হয় তা নিয়ে আতঙ্কে আছি। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গেলে শুধু পটাসের পানি দিয়ে বিদায় করে দেয়। তারা বিষয়টিতে গরুত্ব দিচ্ছে না।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বিডি দাস বলেন, তিন প্রকার অ্যানথ্রাক্স। এর মধ্যে এ এলাকায় কিউটেনিয়াস অ্যানথ্রাক্স হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য এই চিকিৎসকের।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের নানান সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে জনবল অন্যতম। সময়মতো অ্যানথ্রাক্সের টিকা প্রদান না করার কারণে মহামারী আকার ধারণ করতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পশু পালনকারীরা। তবে টিকা প্রদান করা হচ্ছে বলে দাবি জানালেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান।
এদিকে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে গবেষণা করতে আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল।
গবেষণা প্রতিনিধি দলের প্রধান ডা. প্রভাত চন্দ্র সাহা বলেন, পরীক্ষাগারে জীবাণু পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।