মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর শহরের উপকন্ঠে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে ব্র্যাক অফিসের নিকট ডাকাত দলের দু’পক্ষের তুমুল গোলাগুলি হয়েছে। এতে এলাকার ত্রাস বাহিনী প্রধান ডাকাত সর্দ্দার খাদেমুল (২৮) নিহত হয়েছে। সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনালের হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোরের দিকে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত ডাকাত সর্দ্দার খাদেমুল মেহেরপুর শহরের শিশু বাগানপাড়ার রেজাউল হকের ছেলে। তার নামে মেহেরপুর থানায় সন্ত্রাস, ডাকাতি ও হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মেহেরপুর সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, ভোরের দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে ব্র্যাক অফিসের পেছনে ডাকাত দলের দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় থানা পুলিশের একটি দল। পুলিশ পৌঁছুনোর আগেই ডাকাতদল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় সেখানে রাস্তায় ওপর খাদেমুলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান সুটারগান, তিনটি হাতাবোমা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডাকাতরা এগুলো ফেলে গেছে বলে পুলিশের ধারণা।
খাদেমুল পুলিশের তালিকাভুক্ত অন্যতম সন্ত্রাসী জানিয়ে ওসি রবিউল ইসলাম আরও বলেন, সম্প্রতি সময়ে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে একাধিক ডাকাতিসহ বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও ডাকাতি কাজে বাধা দেয়ায় এক রং মিস্ত্রীকে গুলি করাসহ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি খাদেমুল।
এদিকে খাদেমুলের এক ভাই বলেন, গত সোমবার পুলিশ পরিচয়ে খাদেমুলকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে দেখতে সদর থানায় গেলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি রবিউল আলম বলেন, তাকে পুলিশ ধরেনি, তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও আমাদের এখানে আসেনি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনদিন আগে মেহেরপুর শহরের গোহাট সংলগ্ন একটি ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্রে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় খাদেমুলের নামও আসে। খাদেমুল নিহত হওয়ার সঙ্গে ডাকাতির ওই ঘটনার যোগাযোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসীদের কেউ কেউ। তবে এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় অনেকে জানান, খাদেমুল বেশ কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এলাকায় খুন-ডাকাতিসহ মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েও ছিনিমিনি করেছে সে। পুলিশের খাতায় তার নামে বহু মামলা থাকায় সম্প্রতি সময়ে সে বাড়ি ছেড়ে রাতে মাঠে থাকতো। তবে তার কাছে সবসময় বোমা ও অগ্নেয়াস্ত্র থাকতো। খাদেমুল নিহত হওয়ার খরবে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে খাদেমুলের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলেও তার এক স্বজন বলেছেন, খাদেমুল কখনও রাজ মিস্ত্রি আবার কখনও বাসের হেলপারি করতো। অসৎ সঙ্গে পড়ে কয়েক বছর ধরে সে বিপদগামী হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, খাদেমুলদের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামে ছিলো। একসময় তারা মেহেরপুর শহরে চলে আসে এবং মেহেরপুর শহরের গোরস্তানপাড়া ও শিশুবাগান পাড়ায় বাস করতে থাকে।
আরও জানা যায়, প্রায় একযুগ আগে মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে মর্জিনাকে বিয়ে করে খাদেমুল। সংসার জীবনে তাদের ঘরে আসে এক ছেলে। ছেলে মুজাহিদ (৯) মহাজনপুর গ্রামে নানা বাড়িতে থাকে এবং স্থানীয় মহাজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
গতকাল ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে খাদেমুলের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়। বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে নিহতের লাশ মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।