আলমডাঙ্গার গড়চাপড়ায় নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর বাবুর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার

হত্যা রহস্য উন্মোচনে মাঠে নেমেছে পুলিশ : জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৩
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার গড়চাপড়ার নিখোঁজ বাবুর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই গ্রামের উজির আলীর বাড়ি থেকে পুলিশ বাবুর লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়। এর আগে গতপরশু বুধবার রাতে নিখোঁজ হন বাবু। তিনি গড়চাপড়া গ্রামের মসজিদপাড়ার মৃত শুকুর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়েছে। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে বাবুর লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পুলিশ ও গ্রামবাসীসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের গড়চাপড়া গ্রামের মসজিদপাড়ার মৃত শুকুর আলীর ছেলে বাবু আলী (৪৫) গত পরশু বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। রাতেই অনেকে ধারণা করেছিলো বাবুকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। রাতেই গ্রামবাসী টর্চ লাইট ও লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে খুঁজতে। এ সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ গ্রামবাসীর সাথে যোগ দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামের মাঠগুলোতে অনেক খোঁজাখুজি করেও হত্যার আলামত বা লাশের সন্ধ্যান পাওয়া যায় না। রাত ১০টার দিকে ঝড়োবৃষ্টি শুরু হলে খোঁজাখুঁজি বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে গ্রামের মৃত আজাহার আলী শাহের ছেলে উজির শাহের ঘরের মেঝেতে ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পায় গ্রামবাসী। খবর দেয়া হয় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে। পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, লাশের মাথা কান, কাঁধে, হাতে, পিঠে অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ ও পেট থেকে পিঠ পর্যন্ত কুপিয়ে প্রায় দ্বিখ-িত ছিলো। লাশের পিঠের তলায় ৪টি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও সিগারেট উদ্বার করে পুলিশ। তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি উদ্বার করা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাবাসীর ধারনা কোনো নারীকে দিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা।
এ ব্যাপারে বাবু নৃশংসভাবে খুন হওয়া বাড়িটির মালিক বৃদ্ধ উজির আলী শাহ মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমার নিজের জমি নেই, গ্রামের মৃত আরশেদ শাহের ছেলে আজিজুল শাহের মাঠের মধ্যের জমিতে একটি টিনের চাল ও পাটখড়ির বেড়া দিয়ে বসবাস করি। বুধবার সন্ধ্যায় ঈশার নামার পড়ার জন্য ঘরের মধ্যে চৌকিতে শুয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় একজন হুড়মুড় করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তার পেছনে আরও কয়েকজন। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে বাবুকে ফেলে রেখে যায়। আমি ভয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়।
বাবুর স্ত্রী মমতাজ পারভীন মাথাভাঙ্গাকে জানান, সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামেরই হাসির চায়ের দোকানে চা খেয়ে চলে যায় বাবু। তারপর থেকে সে নিখোঁজ, মোবাইল বন্ধ পায়, সকালে গড়চাপড়া গ্রামের মাঠপাড়ার উজির শাহের বাড়ি থেকে তার লাশ পাওয়া যায়।
এলাকাসূত্রে জানায়, বাবু ছিলো পিতা-মাতার ৩ সন্তানদের মধ্যে দু’বোনের একমাত্র ভাই। তার স্ত্রী মমতাজ ও ৪ কন্যাসন্তান ডলি খাতুন (বিবাহিত) পলি খাতুন (১৫), জলি খাতুন (৯) ও নুরজাহান (১) রয়েছে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল জনযুদ্ধ)’র সক্রিয় সদস্য ছিলো বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো বিচাধীন। বেশ কিছুদিন আগে একটি মামলায় হাজতবাস শেষে বাড়িতে ফেরেন। গত বুধবার রাতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হলেন তিনি।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফুন কবীর মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘নিহত বাবু ম-লের নামে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ ৪টি মামলা রয়েছে। তবে তার খুনের কারণ জানা যায়নি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কারা এবং কেন বাবুকে হত্যা করেছে তা উদঘাটনের জন্য। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে।’