স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ফের কারাগারে খালেদা জিয়া

তাকে অসুস্থ বলার সুযোগ নেই : বিএসএমএমইউ পরিচালক : গাড়িবহরে নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ : আটক ১২ জন
স্টাফ রিপোর্টার: স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও এক্সরে শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে আবারও নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খলেদা জিয়াকে। হাসপাতালে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানকালে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তার হাড়ের এক্স-রে করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বিএসএমএমইউতে প্রবেশ করে। তাকে কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় সরাসরি এই হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ হবার পর বেলা দেড়টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে গাড়িবহর কারাগারের পথে রওনা করা হয়। পৌনে ২টার দিকে তাকে কারাগারে পৌঁছুনো হয়।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও খালেদা জিয়া হেঁটেই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তাকে কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কেবিনে নেয়া হয়। সেখানে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কেবিন ব্লকের পাশে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে নিয়ে তার এক্স-রে করানো হয়। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের ১/এ নম্বর রুমে এক্স-রে করা হয়।
পরে এক সংবাদ ব্রিফিং এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার হাড়ের বিভিন্ন অংশের এক্স-রে করা হয়েছে। কাল (আজ রোববার) রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানানো যাবে। তবে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে তিনি ভালো আছেন। ওনাকে অসুস্থ বলার কোনও সুযোগ নেই।’
সাজা হওয়ার ৫৮ দিন পর পুলিশের কালো রঙের একটি পাজারো গাড়িতে (ই-ন. ৫০৪০) করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আজ খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করা হয়। বহরের সামনে-পেছনে ছিলো র‌্যাবের পাহারা। পুরো পথেই যান চলাচল বন্ধ করে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যয়ে ধীরে ধীরে গাড়িবহরের সাথে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী মিছিলসহকারে অগ্রসর হতে থাকে। হাসপাতালের কাছাকাছি লোকসংখ্যা বেড়ে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন আহত হন।
সেখান থেকে ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুজ্জমান শিমুলসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ১২ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুত্রবধূ ও দুই নাতনীর সঙ্গে কুশল বিনিময়: ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অনেক সিনিয়র নেতা হাসপাতালে গেলেও বেগম জিয়ার সাথে তারা কথা বলার সুযোগ পাননি। কেবল মাত্র একফাঁকে সকাল ১১টা থেকে হাসপাতালের সি ব্লকের কাছে অপেক্ষায় থাকা আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই কন্যা জাহিয়া রহমান এবং জাফিয়া রহমানের সাথে কুশল বিনিময় করার সুযোগ পান বেগম জিয়া।
এদিকে কেবিন ব্লকের সামনে আনার পর হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন স্বাগত জানান খালেদা জিয়াকে। গাড়ির সামনে হুইল চেয়ারটি আনা হলে খালেদা জিয়া হাসপাতালের পরিচালককে বলেন, ‘এটার প্রয়োজন নেই। আমি হেঁটেই যাবো।’ এরপর পত্রপত্রিকা টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীদের অনুরোধ-আবদার- ‘ম্যাডাম এদিকে একটু।’ খালেদা জিয়া আলোকচিত্রীদের অনুরোধও রাখেন। সাংবাদিকরা-‘কেমন আছেন’- প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো জবাব না দিয়ে কেবল মুচকি হাসেন। এ সময় সাদাকালো জামদানি প্রিন্ট শাড়ি এবং রঙিন সানগ্লাস পরা খালেদা জিয়াকে স্বাভাবিক হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিলো।
পরে পুলিশি কর্ডনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে ১৯ নং লিফটে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে খালেদা জিয়া কেবিন ব্লক থেকে নেমে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান হেঁটেই। সেখানে কক্ষ নং ১/এতে তার এক্সরে হয়। এক্স-রে বিভাগ থেকে বেলা দেড়টায় কারাগারের উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার আগে কেবিন ব্লকের বারান্দাগুলোতে রোগী, নার্স, চিকিসকসহ উত্সুখ মানুষের দিকে হাত তুলে তাদের শুভেচ্ছা জানান বেগম জিয়া।
মনে হয়েছে খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন: বিএসএমএমইউ পরিচালক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাড়ের বিভিন্ন অংশে এক্স-রে করা হয়েছে। আজ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানানো যাবে। তবে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে তিনি ভালো আছেন।
গতকাল দুপুরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ওই হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইচ্ছে অনুযায়ী তার ব্যক্তিগত চারজন চিকিত্সকের উপস্থিতিতে হাড়ের বিভিন্ন অংশে এক্স-রে করা হয়েছে। তারা হলেন- ডা. মামুন, ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. ওয়াহিদুর রহমান ও ডা. শুভ।